Swami Vivekananda Jibon Kahini Bangla | স্বামী বিবেকানন্দ

স্বমী বিবেকানন্দের জীবন কাহিনী


Swami Vivekananda Jibon Kahini Bangla | স্বামী বিবেকানন্দ

স্বামী বিবেকানন্দ



‘ডেট্রয়েটে স্বামীজী ঝড়ের মুখে পড়েছিলেন। সেই ঝড় তুলেছিলেন ক্ষিপ্ত মিশনারিরা। সাহসী স্বামী বিবেকানন্দ যাঁদের সমস্তরকম গোঁড়ামি ও ভারতবর্ষ সম্পর্কে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে। পরােক্ষে বােঝাতে চেয়েছিলেন—অপপ্রচার বন্ধ করুন, আমাদের সভ্যতা আপনাদের চেয়েও অনেক প্রাচীন। সে ছিল ১৮৯০ এর দশক। সাগরপারে ভারতবর্যের কথা | খুব কম লােকই শুনেছেন। যার ফলে, যা খুশি তাই গল্প।

- তৈরি করে মানুষকে চমকে দেওয়া যেত। আমেরিকায়। | ভারতবর্ষ সম্পর্কে দুটি ভুল ধারণা প্রচারিত ছিল। একটি হল—অনৈতিকতা, পৌত্তলিকতা ও কুসংস্কার। দ্বিতীয়টি হল—সেদেশে যাঁদের মহাত্মা বলা হয় তারা অতীন্দ্রিয় শক্তির সাহায্যে আশ্চর্য আশ্চর্য সব ঘটনা ঘটাতে পারেন। তারা তাদের মানসিক শক্তির দ্বারা ইচ্ছামতাে এই জগতের সব রহস্যের সন্ধান পেতে পারেন। বিজ্ঞানের সাহায্যের। প্রয়ােজন হয় না। কখনও কখনও এটি প্রশংসার আকারও নিত। আমেরিকার মানুষ সবিস্ময়ে ভাবতেন, এইসব মহামানব ভগবানের কোলে বসে আছেন। পরিষ্কার কোনও ধারণা না থাকায় অতীন্দ্রিয়বাদ, আধ্যাত্মিকতা, অতিবিজ্ঞান ও মাথার পাগড়ির মধ্যে তালগােল পাকিয়ে বিচিত্র এক ধারণা তৈরি হল। যেটিকে এক কথায় বলা যেতে পারে।

অস্বচ্ছ রহস্য। রােমহর্ষক কোনও উপন্যাসের কাহিনির মতাে।

- দ্বিতীয় এই বিচিত্র ধারণাটির ফলে স্বামীজীকে বহু সময় বিপদে পড়তে হয়েছে। এইরকম একটি ঘটনা ১৪ ফেব্রুয়ারির ইভনিং। নিউজে পাওয়া যায়। সংবাদপত্রে স্বামীজীকে অভিনন্দন জানিয়ে । একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হল। শিরােনাম- “আমাদের কিছু যাদু দেখান। | ‘শুনতে হয়তাে খুব বিশ্রী লাগবে, কিন্তু যখন প্রাচ্যের সেই আশ্চর্যজনক মহাত্মাই বলুন বা পুরােহিতই বলুন, এইরকম একজন মানুষকে পাওয়া গেছে তখন ডেট্রয়েটের পক্ষ থেকে তার কাছে। আমাদের এ দাবি উপস্থিত করা অন্যায় হবে না, তিনি হয়। ‘আমাদের কিছু দেখাবেন, না পারলে মুখ বন্ধ করবেন।” গত ১০/১৫ বৎসর যাবৎ খ্রীস্টভূমির মানুষদের বিশ্বাস করতে বলা হয়েছে যে, ভারতে কোন কোন উচ্চশ্রেণীর মধ্যে এমন অনেক মানুষ আছে যাদের গুপ্তবিদ্যার প্রজ্ঞা ও প্রকৃতির বিধি সংক্রান্ত জ্ঞান পাশ্চাত্যবাসীর তুলনায় অনন্তের কাছাকাছি। অনেক আগেই প্রাচ্য ফকিরদের হাত-সাফাইয়ের কৌশল সর্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শনরূপে স্বীকৃতি জগতের যে কোন জায়গাতেই পাওয়া যায়। এইসব চালাকিগুলিই আশ্চর্য আশ্চর্য কাজের গল্পের পটভূমি তৈরি করেছে, যাতে নাজারেথের যীশুর অলৌকিক কাহিনীর সঙ্গে ভারতের সমকক্ষতা। দাবি করা হয়। বর্তমানে ‘এ্যারেনা’ পত্রিকায় কতকগুলি রচনা প্রকাশিত হয়ে। চলেছে যাতে একজন দাবি করেছেন সবই তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন, যার দ্বারা তিনি প্রমাণ করতে চাইছেন প্রাচ্যে দক্ষতাসম্পন্ন মানুষরা বিশ্বের অন্তর্লোকের সন্ধান পেয়েছেন এবং প্রকৃতির শক্তিকে সম্পূর্ণ বশীভূত করেছেন। চল্লিশ থেকে পঁচাত্তর ফুট উঁচু বড় বড়। গাছ কয়েক মিনিটের মধ্যে চোখের সামনে গজিয়ে তুলে সেই গাছে। দর্শকদের ওঠারও সুযােগ দিতে পারেন। যেসব পাহাড় পর্বত শতাব্দীর পর শতাব্দী দাঁড়িয়ে আছে তাদের অদৃশ্য করে আবার ফিরিয়ে আনতে পারেন; মহাপুরুষদের আঙুলের ডগা থেকে। বজ্রপাত যা তাদের অভীষ্ট ক্ষতিসাধনও করতে পারে—এইরকম। অনেক কিছু হয় যাতে বােঝায় তাঁরা দৈবশক্তিসম্পন্ন। _ এইসব আশ্চর্য ক্রিয়াগুলি যদি ভােজবাজির দক্ষতার ক্ষেত্রে পাশ্চাত্যের চেয়ে প্রাচ্যের শ্রেষ্ঠত্ব দেখাবার জন্য উপস্থাপিত হয়। তাহলে সেটা মেনে নিতে আমরা রাজি আছি। এইসব উপস্থিত করে দাবি করা হয় যে, ভােজবিদ্যাবিশারদেরা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি বস্তুর অভ্যন্তরে পৌঁছেছেন এবং আমাদের এই গর্বের সভ্যতা কতখানি শিশুসুলভ ও নিচু। দাবি করা হয় এই বিদ্যাবি ধর্মীয় প্রজ্ঞায় বেচারা খ্রীস্টান পৌত্তলিকদের তুলনায় জ্যোতিষ্কতুল্য।
এসবের স্পষ্ট উত্তর হলাে, এইসব ভেলকিবাজির দাবি যদি সত্য হতাে তাহলে সেইসব কুশলীরা অবশ্যই পাশ্চাত্যে এসে সেইসব যাদু দেখিয়ে কিছু মিশনারি কাজ করতেন এবং প্রাচ্য প্রজ্ঞা কি। করতে পারে সেটা দেখাতেন। কুশলীরা বলেন, গােপন কারণের জন্য এটা তারা করেন না কিন্তু বিশ্বমেলা এইরকম এক ঝাক মানুষকে আমাদের দেশে এনেছেন এবং তাদের মধ্যে একজন। বর্তমানে ডেট্রয়েটে রয়েছেন। এই মুহূর্তটিই সেইসময় যখন স্বামী। বিবেকানন্দকে নােটিস দিতে পারি যে এখন তার সামনেই সেই সুযােগ এসেছে যখন তিনি যাদুকরী শক্তি সম্বন্ধে যেসব কথা বলা। হয় তা সত্য বলে প্রমাণ করতে পারেন। ইউনিটেরিয়ান চার্চে স্বামী বিবেকানন্দ বক্তৃতা দেবেন কিন্তু তিনি শুধুই বক্তৃতা দেবেন, আর কিছু করবেন না? হাজার হাজার। অ্যামেরিকান আছেন যারা তার থেকে ভাল এবং তার চেয়ে দীর্ঘতর বক্তৃতা দিতে পারেন। তারা আরও সুমিষ্ট কথা এবং বেশ চমৎকার-তর ভাবে বলতে পারেন, কিন্তু তারা দশ হাজার দর্শকের চোখের সামনে একটা পাইন গাছ গজিয়ে তুলতে পারেন না। তারা বেলে দ্বীপকে স্থাপন করতে পারেন অতিরিক্ত এই রকম গর্বের মহত্তর ধর্মের চেয়ে ভাল, এটা তার লাখ লাখ পাশ্চাত্য দৃষ্টিতে আশ্চর্য বলেও কিছু দেখা যায় কোথায় দেখব?

উত্তর: পর্যন্ত কিছু পর্যটকের গল্পের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হাজার হাজার মানুষ সােৎসাহে গলাধঃকরণ করেছে। সেইরকম দৃষ্টিনন্দন কিছু ডেট্রয়েটে দেখান। অভিনন্দন চ্যালেঞ্জ! স্বামীজীকে হেয় করার চেষ্টা। কে প্রতিবাদ করবেন! একজন অবশ্যই ছিলেন, স্বামীজীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ডেলডক। এই ভদ্রলােক বিশপ নিনডেকেও ছেড়ে দেননি। জবরদস্ত জবাব দিয়েছিলেন। তিনি ইভনিং নিউজকে সমুচিত একটি জবাব দিলেন। উদ্ধৃতি; ১৪ ফেব্রুয়ারি ইভিনিঙ নিউজ’-এ “আমাদের কিছু যাদু সম্পাদকীয় পড়ে বিস্মিত ও বিরক্ত কিছু কম হইনি। হিন্দু সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ শিকাগাে ধর্মসভায় শুধু সকল শ্রেণীর নয় উপস্থিত সকল শ্রোতারও মানসিক উন্নতি সাধন ও তাদের দান করেছেন। তারই ডেট্রয়েট আগমন উপলক্ষে প্রবন্ধটি রচিত। তার অকপটতা, সারল্য ও চমৎকার মানসিকতাকে অতিক্রম করতে পারে একমাত্র তার সকল ধর্মের মধ্যে ঐক্য স্থাপন সৌহার্দ্যসৃষ্টির প্রচেষ্টা। সংক্ষেপে বলতে গেলে প্রবন্ধটিতে বিবেকানন্দকে তারা (সম্পাদক গােষ্ঠী) আশ্চর্যজনক পূর্বভারতীয় মহাত্মাদের। অন্যতমরূপে আহ্বান করে “হয় তিনি দেখাবেন না হয়

বলে যেসব রহস্যময় যাদু সে দেশে কিছু কিছু পর্যটক বলে জানিয়েছেন তারই কিছু দেখাবার জন্য চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। বর্তমানে পত্রিকায় ডাঃ প্রবন্ধের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেই কথাগুলি বলা হয়েছে। সম্পাদকীয়তে। অবজ্ঞাসূচক ও ব্যঙ্গচ্ছলে কুশলীদের এইসব ‘ন্যাজারেথের যীশুর অলৌকিক কার্য’-এর সমতুল্য স্বীকার করেও সিদ্ধান্ত করা হয়েছে সেগুলি “ফকিরদের। ভােজবাজি” ছাড়া আর কিছু নয়। সম্পাদকীয়তে উপসংহারে হয়েছে “কানন্দ শুধুই বক্তৃতা না দেখিয়ে দেবেন এবং যেহেতু তিনি তথাকথিত অলৌকিক ব্যাপারগুলো দেখাবেন না তাই তার ধর্মের ভালোর চেয়ে মন্দ করবেন।”

| সম্পাদকীয় প্রবন্ধলেখকের জানা উচিত যে, অলৌকিকতা বলে | কিছু নেই, পূর্বেও ছিল না, কিছই অতিপ্রাকৃত নয় এ কথা তার। (ববে কানন্দের) চেয়ে জোরাল ভাষায় অন্য কোন প্রাচ্য প্রান্ত | ব্যক্তি” অথবা “প্রাচ্য বিষয়ে অবহিত বদ্ধিমান পর্যটক" কখনাে | ঘােষণা করেননি। এই পর্বভারতীয়রা আধ্যাত্মবাদী এবং অন্যান্য গভীর চিন্তাশীল ব্যক্তিরা, যা দাবি করেন তা হলাে, সে দেশের প্রাজ্ঞ ব্যক্তিদের প্রকৃতির গােপন শক্তি, আধ্যাত্মিকতা, প্রায়ােগিক মানবিকতা, ধর্মীয় রহস্য ও সাধারণভাবে ইন্দ্রিয়াতীত জগৎ সম্বন্ধে সেই পরিশুদ্ধতর জ্ঞান আছে যা পাশ্চাত্য জগতের অনেকের কাছে আজও উদঘাটিত হয়নি। – তারা আর্যজাতি সম্পর্কে, প্রাচীন পৃথিবী সম্পর্কে, বর্তমানযুগে লুপ্তপ্রায় শিল্পবিজ্ঞানসমৃদ্ধ সংস্কৃত সাহিত্য সম্পর্কে এবং সকল ধর্মের মূলভিত্তি সম্পর্কে অনেক বেশি জ্ঞানের অধিকারী। আমাদের নিজেদের দেশে বর্তমানের ত্রুটি এবং দুষ্টবুদ্ধির জন্যে যেমন এখানকার ভাল লােকেরা দায়ী নয় তেমনি প্রাচ্যের কুসংস্কার, ভড়ং-এর জন্যে বা যারা ভুল কিংবা পাপ কাজ করে -

তার জন্যে সেখানকার প্রাজ্ঞজনেরা দায়ী নয়। দান ও মানবতার বিশুদ্ধ ও সহজ ধর্মের এক সৎ উগতাকে এইভাবে তার সেই বিশাল ও বিচিত্র দেশের, যাদের স্বয়ংঘঘাষিত খ্রীষ্টানরা পৌত্তলিক বলে আনন্দ পান, তাদের কিছু লােকের ত্রুটির জন্যে দায়ী করা হচ্ছে কেন? আমাদের সাম্প্রদায়িক মিশনারিদের তাদের দেশে। পাঠাব অথচ তাকে লাথি মেরে এ দেশ ছাড়া করব এ কেমন কথা! তিনি কিছু প্রপঞ্চময় ভােজবাজির খেলা দেখিয়ে আমাদের বিভ্রান্ত করতে পারেন না কারণ অলৌকিকতা নামক বস্তুটির। | কোনদিনই অস্তিত্ব নেই।। জীবিতকালে যীশুও অনুরূপভাবে কিছু মূখ-ইতর মানুষের দ্বারা | উত্ত্যক্ত হয়েছিলেন। তারা তার পবিত্র নামে বিশ্বাস করেনি এবং | তাকে একজন ভণ্ড বলে অভিযােগ এনেছে। অবশেষে সেই গোড়া সাধারণ মানুষ তার মুখে থুতু ছিটিয়ে তার মৃত্যুর পরােয়ানা ঘােষণা করে চিৎকার করেছে “ওকে ক্রুশবিদ্ধ কর।” যখন ব্যঙ্গ করে। | তাকে বলেছে আমাদের কিছু ভােজবাজি দেখাও” তখন তিনি । নম্রভাবে তাদের ভৎসনা করে বলেছেন, “তােমরা মুসাকে বিশ্বাস কর না—পয়গম্বরকেও কর না যদিও তােমরা বিশ্বাস কর তাদের মধ্যে একজন মৃতদের মধ্য হতে জীবিত হয়েছিলেন। অজ্ঞরাই অলৌকিকতা আশা বা অন্বেষণ করে। একমাত্র ভারত বা অন্য দেশের কুশলী ব্যক্তিরা কখনই বিস্ময়কর কিছু করার দাবি করে না। তারা তাদের সুদীর্ঘ উপবাস, শিক্ষা দৈহিক কামনার বিনাশ ও ধ্যানের সাহায্যে যে উচ্চ আধ্যাত্মিকতা অর্জন। করে তার দ্বারা প্রকৃতির সূক্ষ্মতর শক্তির অধিকারী হয়ে যেসব কাজ করে সেগুলিই কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনে ভয় ও বিস্ময় জাগায়। যেসব । বৈজ্ঞানিক সেই আশ্চর্য দেশের সঙ্গে পরিচিত তারা সকলেই ঘােষণা করেছেন দেশের কুশলীরা সম্মােহন শক্তিতে সুদক্ষ সুপ্রাচীন কাল যাবৎ তারা বৈদ্যুতিক শক্তি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক বিস্ময় সম্পর্কে জ্ঞানসম্পন্ন। ভারত অতি প্রাচীন দেশ—আমাদের। জন্মের পূর্ব থেকেই সে দেশ বর্তমান। সেই দেশের জ্ঞানীরা এখন অনেক কিছুই বিস্মৃত হয়েছেন যা আমাদের এই কালের সভ্য মানুষের জ্ঞানের পরিধি ছাড়িয়ে যায়। স্বামী বিবেকানন্দ যদি পবিত্রতা, নিঃস্বার্থতা ও ভ্রাতৃপ্রেম সমন্বিত শান্তির এক নুতন গসপেল উপস্থিত করতে সক্ষম হন, যদি ধর্মান্ধতায় আবদ্ধ দৃষ্টিকে উন্মুক্ত করতে পারেন এবং অসহিষ্ণুদের ১ বধির কর্ণকে মুক্ত করে স্বঘােষিত খ্রীস্টানদের দেখাতে পারেন যে, খ্রীস্টানদের মধ্যে যার অভাব আছে সেই গুণাবলীও পৌত্তলিকদের মধ্যে বর্তমান এবং সর্বোপরি মানবসমাজের কঠিন হৃদয়কে দ্রবীভূত করতে পারেন, যার সফলতার পরিচয় এর মধ্যেই তিনি দিয়েছেন, তাহলে আমাদের কাছে তার মিশন ব্যর্থ হবে না।। . 191. (5 | বেশ কিছু কাল পরে আর একটি প্রতিবাদপত্র লেখা হয়েছিল ফ্রী | প্রেসের সম্পাদকের কাছে। লেখক স্বামীজীর মুদ্রিত বক্তৃতা মালার | পাঠক। তিনি মনে করেছিলেন, স্বামীজীর লেখায় যুক্তির যেসব ত্রুটি তার চোখে পড়েছে সেগুলি স্বামীজীকে জানান উচিত। চিঠিটি | প্রকাশিত হয়েছিল। পাঠক বিভ্রান্তির শিকার। তিনি ঠিকমতাে বুঝতে পারেননি। তার না বােঝাটাকেই সগৌরবে হাজির করতে | চেয়েছিলেন। চিঠির উপসংহারটি পাঠযােগ্য। সেটি উদ্ধৃত হল। ‘হিন্দুটির এইসব ভুলত্রুটি সত্ত্বেও তার বক্তব্যের মধ্যে যথেষ্ট সত্যবস্তু আছে এবং তার প্রয়ােগ আত্মঘােষিত খ্রীস্টানদের পক্ষে লাভজনকই হবে। বস্তুত এটা ঠিক যে, আজ খ্রীস্টধর্মে যে শিক্ষা দেওয়া হয়, যেভাবে তা আচরিত হয়, তাতে কোন কোন “জাতির, মানবগােষ্ঠীর বা ভাষার’ খুব সামান্য অংশের লােকই তা থেকে মূল্যবান কিছু পায়। আজকের খ্রীস্টধর্ম যীশু বা অন্যান্য তাঁর। অন্তরঙ্গ-সন্তদের প্রদত্ত শিক্ষার হাস্যকর অনুকরণ মাত্র। এই হিন্দু আচার্যের প্রতি স্বঘােষিত খ্রীস্টানরা ‘কিছু যাদু দেখান' লিখে যে বর্বর ও অধার্মিকোচিত কলরব শুরু করেছেন, তিনি তার যােগ্য। জবাব দিতে পারেন। | চিঠির শেষ অংশটি লেখকের খােলা মনের পরিচয় বহন করে।। এই উদারতার জন্যই সুন্দর। এর পরে স্বামীজী স্বয়ং আসরে নামলেন। ইভনিং নিউজের সম্পাদকীয়টির যথােচিত জবাব দিলেন। ক্ষমা প্রার্থনা নয়, আত্মপক্ষ সমর্থনের সাহসে ভরা একটি প্রত্যুত্তর। সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারের আকারে প্রকাশিত হল ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৪-এর সংখ্যায়। শিরােনাম দেওয়া হল, বিশুদ্ধ হিন্দুধর্মে অলৌকিকতা নেই। ‘আমি ‘দি নিউজ’ –এর অনুরােধ মতাে আমার ধর্মের সমর্থনের | কোন অলৌকিকতা দেখাতে সম্মত নই,” “দি নিউজ | সাময়িকপত্রের এক সম্পাদকীয় দেখবার পর তার প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাৎকারকালে বিবেকানন্দ বলেছেন, প্রথমত আমি যাদু প্রদর্শক নই এবং দ্বিতীয়ত আমি স্বীকার করছি হিন্দুধর্ম কোন অলৌকিক কর্মকাণ্ডের ভিত্তির ওপর গড়ে ওঠেনি। এ রকম। জিনিসকে আমরা অলৌকিক কর্মকাণ্ড বলি না। অনেক বিস্ময়কর | বস্তু আছে যা আমাদের পঞ্চেন্দ্রিয়ের নাগালের বাইরে কিন্তু সেগুলি | ঘটে একটা নিয়মের সূত্রে। আমাদের ধর্মের সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক নেই। সেখানে যেসব আশ্চর্যজনক ঘটনা হয় বলে বিদেশী কাগজে | প্রকাশিত হয় তার অধিকাংশ হাত-সাফাই বা সম্মােহন প্রসূত। | প্রাজ্ঞ লােকেরা এসব কাজ করেন না। তারা পয়সার জন্যে ঘুরে। ঘুরে বাজারে খেলা দেখিয়ে বেড়ান না। তাদের দেখতে ও জানতে পারে তারাই যারা বালসুলভ কৌতুহল নিয়ে তাদের কাছে উপস্থিত হয় না—উপস্থিত হয় সত্যের অন্বেষণে।

_________________

প্রত্যেক জীব শক্তি প্রকাশের এক একটি কেন্দ্র। পূর্বের কর্মফলে সে শক্তি সঞ্চিত হয়ে আছে, আমরা তাই নিয়ে জন্মেছি। যতক্ষণ সে শক্তি কার্যরূপে প্রকাশ না হচ্ছে,
ততক্ষণ কে স্থির থাকবে বল? ততক্ষণ ভােগ কে ঘােচায় বল? তবে দুঃখ ভােগের চেয়ে সুখভােগটা ভাল নয়? কুকর্মের চেয়ে সুকর্মটা ভাল নয়? পূজ্যপাদ শ্রীরামপ্রসাদ বলেছেন, “ভাল মন্দ দুটো কথা, ভালটা তার করাই ভাল’ এখন ভালটা কি? ‘মুক্তিকামের ভাল’ অন্যরূপ, ‘ধর্মকামের ভাল’ আর একপ্রকার। এই গীতা প্রকাশক শ্রীভগবান এত করে বুঝিয়েছেন, এই মহাসত্যের উপর হিদুর। স্বধর্ম, জাতিধর্ম ইত্যাদি।
Previous Post Next Post