ঘাটশিলা গালুডি (পশ্চিমবঙ্গ)


(ঘাটশিলা গালুডি):- একঘেয়ে জীবন থেকে হাঁপ ছাড়তে একদিন ভােরের আলাে ফোটার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ছয় বন্ধু মিলে বেরিয়ে পড়লাম। হাওড়ায় এসে চাপলাম ইস্পাত এক্সপ্রেসে গন্তব্য গালুডি৷ সকাল ১১টা নাগাদ যখন গন্তব্যে পৌছাল, প্রথমেই ধাঁধা এক বন্ধু যখন 
বলছে ট্রেন স্টেশনে ঢুকেছে, নামতে হবে, তখন আমি প্ল্যাটফর্ম খুঁজছি কিন্তু তাে সার বন্ধুদের সঙ্গে নামলাম রেললাইনের উপর ট্রেন চলে গেলে দেখলাম প্ল্যাটফর্মের অস্তিত্ব উল্টোদিকে প্রায় রেললাইনের সমতলে।

দুপুরে খাওয়া-দাওয়া সেরে বিশ্রামের পর গাড়ি নিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম। সুবর্ণরেখা নদীর পাড় ধরে সবুজের সমারােহে শহুরে চোখে মহুয়া, ভুট্টার গাছ দেখতে দেখতে আমরা পৌছালাম গালুডি ড্যামে ঝাঁ-চকচকে রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে দেখলাম বাঁধের একদিকে সুবর্ণরেখার শান্ত রূপ, অন্যদিকে জলােচ্ছাস বিকেলের ম্লান আলােয় সুবর্ণরেখা বেশ মায়াময়। দিন গড়ালে শান্ত নদী থেকে চোখ ফেরে রুক্মিণী মন্দিরে এখানে দেবীমুর্তি নেই, শিলাই দেবীরূপে পূজিত হন মন্দিরের দু’পাশে রয়েছে গণপতি ও বজরংবলীর মন্দির ঈশ্বরের আশীর্বাদ নিয়ে আমাদের পরবর্তী গন্তব্য নাড়য়া পাহাড়। এখানে অবশ্য পাহাড়ে চড়ার ব্যাপার নেই সামনে বয়ে চলা সুবর্ণরেখার জলকে সাক্ষী রেখে তীরে দাঁড়িয়ে দুর থেকে গাছগাছালিভরা পাহাড়টির সৌন্দর্য প্রাণভরে মাখছি মাত্র এবার গাড়ি ছুটল সিদ্ধেশ্বরী পাহাড়ে। পাহাড়ের নীচে গাড়ি রেখে মনভরানাে সবুজ গাছপালার মধ্যে লাল কাঁকুড়ে চড়াই ভাঙতে ভাঙতে আমরা পৌছালাম পাহাড়ের মাথায় এই পাহাড় নাড়য়া পাহাড়ের ক্রমান্বয় এখানেই সিদ্ধেশ্বর (শিব) মন্দির মন্দিরে স্থাপিত শিবলিঙ্গের অর্ধেক দৃশ্যমান আর ঠিক পিছনেই নিজের উজ্জ্বল উপস্থিতি নিয়ে উপবিষ্ট মহাদেবের শ্বেতশুভ্র বাহনটি | পরের দিন সকালে আমরা গেলাম টাটানগর উদ্দেশ্য ডিমনা লেক। দেখলাম বিস্তৃত জলরাশিতে রােদুরের ঝিকিমিকি দুরে সবুজ পাহাড় রেলিং ঘেরা উঁচ পাড়ে-বাঁধানাে রাস্তায়—ভ্রমণার্থীরা | তারিয়ে তারিয়ে উপভােগ করছেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য লেকে নৌকাবিহারেরও ব্যবস্থা আছে। ইচ্ছে হলে জলের সঙ্গে আলাপ করা শুধু সময়ের অপেক্ষা। এখন থেকে আমাদের যাত্রা চাণ্ডিল লেকে গাড়ি এসে দাঁড়াল চাণ্ডিল বাঁধের উপর। তখন বাঁধে লকগেটের একটা অংশ কিছুটা খােলা সেখান থেকে তীব্র বেগে জল বেরচ্ছে। বাঁধের বিপরীতে অবশ্য লেকের জল যথারীতি শান্ত। দিনের শেষ দর্শনীয়। স্থানটি ছিল জুবিলি অ্যামিউজমেন্ট পার্ক প্রবেশমূল্য দিয়ে ভিতরে ঢুকলে দেখা  যাবে বিনােদনের বহু উপকরণ সাজানাে। নৌকাবিহারসহ বেশকিছু বিনােদন বিনামূল্যে, আবার বুল-ফাইটিংসহ কিছু আছে অর্থের বিনিময়ে। পার্কে পেটপুজোরও সুবন্দোবস্ত রয়েছে | ফিরে আসার দিন ঘুরলাম ঘাটশিলা। আমাদের প্রথম দর্শন ছিল ধারাগিরি বােল্ডারের সর্পিল পথ ধরে সমতল থেকে অনেকটা উপরে আমরা পৌছালাম সেই ঝরনায় পাহাড় থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রবাহিত হচ্ছে জলের ধারা সেই জলে তৈরি হয়েছে ক্ষুদ্র জলাশয়। আশপাশের অঞ্চল থেকে আসা পুণ্যার্থীদের অনেকেই সেখানে স্নান সেরে পুজো দেন জলাশয়ের গায়েই তৈরি হওয়া শিবের ছােট্ট থানে স্থানীয় এক প্রবীণ বাসিন্দা এখানে একটি শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করে দীর্ঘ কুড়ি বছর ধরে পুজো করে আসছেন মহাদেবকে প্রণাম জানিয়ে আমরা এলাম একদিকে খাদ
অন্যদিকে পাহাড়; মাঝখানের জলাশয়ের সামনে। সুবিস্তৃত লেক যতদূর চোখ যায় শুধু জল আর তার চারদিকের সীমানায় সবুজ, ধূসর পাহাড় লেকে কোথাও কোথাও পড়েছে চড়া রােদ ঝলমলে দিনে জলে খেলা করছে চর ও পাড়ের ছায়া পারে এ গাছ ও গাছে লাফিয়ে বেড়াচ্ছে সুদৃশ্য ফড়িং এখান থেকে আমরা গেলাম ফুলডুমরি পাহাড় এবং সবশেষে সাহিত্যিক
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি গৌরীকুঞ্জে বাড়ির মূল-ফটকের সামনে স্থাপিত কথা সাহিত্যিকের আবক্ষ মূর্তি আজও সযত্নে রক্ষিত হচ্ছে তাঁর শয়ন এবং বিশ্রাম কক্ষদুটি শয়নকক্ষে শােভা পাচ্ছে তাঁর সারা জীবনের সাহিত্যকীর্তি মনটা বিষগ্ন হয়ে গেল আচ্ছা, বিখ্যাত মানুষরা অমর হন না কেন বলুন তাে? আরও অসাধারণ কাজ পেতাম আমরা। তাই না!



Previous Post Next Post