স্বাস্থ্য সচেতনতা | চিকিৎসা ভয় কাটানোর উপায় 


স্বাস্থ্য সচেতনতা | চিকিৎসা ভয় কাটানোর উপায়

(পরামর্শে ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি কলকাতা অধিকর্তা)
 (স্বাস্থ্য টিপস)
ভয় কী?
মনােবিজ্ঞানের ভাষায় ভয়ের নির্দিষ্ট করে কোনও সংজ্ঞা বলা নেই। এক্ষেত্রে ভয়কে একটি খারাপ অনুভূতি হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে। কোনও বস্তু, পদার্থ, জীব বা ঘটনা থেকে ভয় হতে পারে। ভয় পেলে সেই বিষয়টি থেকে মানুষ দূরে থাকতে পছন্দ করেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অঙ্ক কষার ভয়ে অঙ্ক না করা, কুকুর কামড়ানাের ভয়ে কুকুরের কাছে না যাওয়া ইত্যাদি। 


ভয় কত প্রকারের হয়?

ভয়কে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়, র্যাশনাল ফিয়ার এবং ইরর্যাশনাল ফিয়ার।। র্যাশনাল ফিয়ারের অর্থ হল যুক্তিযুক্ত ভয়। কয়েকটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি বুঝে নেওয়া যাক। ধরুন কোনও ব্যক্তি রাস্তার খােলা খাবার খেতে ভয় পান, কেউ আবার অফিসে এক মিনিট দেরি করে ঢুকতে ভয়। পান। এবার দেখুন, এই দুই ক্ষেত্রেই ভয়ের। কারণ আলাদা হলেও লক্ষ্য কিন্তু একই। এরা দুজনই নিজের ভালাে চান। প্রথম জন ভয় পান রাস্তার খাবার খেলে তাঁর শরীর খারাপ হতে পারে। দ্বিতীয় ব্যক্তির । ভয় আবার অফিসে দেরি করে ঢােকার জন্য কর্তৃপক্ষের খারাপ নজরে পড়তে পারেন। তাই এঁরা দুজনই নিজের নিজের মতাে করে এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকেন, যেই কাজ তাঁদের ক্ষতি করতে পারে। আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই এমন হাজারাে ভয়ের।

কারণ বা র্যাশনাল ফিয়ারের উদাহরণ। রয়েছে। জানার বিষয় হল, দেশ-কাল-সময় ভেদে আবার বেশ কিছু র্যাশনাল ফিয়ার বদলে যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমাদের দেশে গুরুজনদের সামনে সাধারণত মদ্যপান বা নেশা করার রেওয়াজ নেই। তাই সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার। ভয়েই এ দেশের বেশিরভাগ মানুষ । গুরুজনের সামনে নেশা করতে ভয় পান। ঠিক তেমনই রাত করে বাড়ি ফেরাও এ। দেশে তেমন প্রচলিত নয়। এটা আমাদের দেশের র্যাশনাল ফিয়ার। কিন্তু একবার আমেরিকা এবং ইউরােপের দেশগুলির কথা ভেবে দেখুন। সেই সব দেশগুলিতে এই বিষয়গুলির তেমন কোনও গুরুত্বই নেই। সে দেশের অধিবাসীরা সকলের। সামনেই মদ্যপান করেন, অনেক রাতে বাড়ি আসেন। এগুলি তাঁদের সংস্কৃতির অঙ্গ। তাঁরা এভাবেই বড় হয়েছেন। তাই তাঁদের মধ্যে। এই ধরনের র্যাশনাল ফিয়ার নেই।। র্যাশনাল ফিয়ারের ক্ষেত্রে সময়ের গুরুত্বও রয়েছে বেশ অনেকখানি। এই এক শতক আগেও ভারতে মেয়েরা সামাজিক চাপে বাড়ির বাইরে তেমন একটা বেরতেন না। এমনকী বাড়ির পুরুষ বাদে অন্য পুরুষের সামনে মুখ দেখানােও নিষেধ ছিল। এটা ছিল তখনকার সময়ের মহিলাদের র্যাশনাল ফিয়ার। অথচ আজ যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সেই দুঃসহ সময় অনেকটাই কেটে গিয়েছে। এখন ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ির বাইরের কাজেও মেয়েরা পারদর্শী হয়ে। উঠেছেন। তাঁরা শিক্ষিত। তাঁরা নির্ভীক। তাঁরা আত্মাভিমানী। এটা মাত্র একটা উদাহরণ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গুরুত্ব হারিয়ে ফেলা। এমন র্যাশনাল ফিয়ারের উদাহরণ কম
নেই।
এবার আসা যাক ভয়ের দ্বিতীয় ভাগ, অর্থাৎ ইরর্যাশনাল ফিয়ারের কথায়। সহজ বাংলায় ইরর্যাশনাল ফিয়ারের অর্থ হল অযৌক্তিক ভয়। বেশিরভাগ। ক্ষেত্রেই এই ভয়ের কারণের। থেকে তেমন কোনও শারীরিক বা মানসিক সমস্যার আশঙ্কা থাকে। না। এক্ষেত্রে প্রথমেই আসবে সাইকোটিক ফিয়ারের কথা। এই বিশেষ ধরনের ভয়ের বিভিন্ন রূপ রয়েছে। উদাহরণের মাধ্যমে।
কয়েকটির সম্বন্ধে জেনে নেওয়া যাক কোনও ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে একা হেঁটে যেতে ভয় পান। তার ভয়, তিনি একা রাস্তায়। বেলে অ্যাক্সিডেন্ট বা শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হলে তাঁকে কে বাঁচাবে। তাই তিনি রাস্তায় বেরনাে ছেড়ে দিয়েছেন। এই ধরনের ভয়কে বলে ফিয়ার অব বিং হার্মড একজন রাস্তায় বেরিয়ে ভাবেন, আশপাশের প্রতিটি মানুষ তাঁর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। যেন তাকে সন্দেহের চোখে দেখছে। তাই তিনি রাস্তায়। যেতে চান না। এই ভয়ের নাম ফিয়ার অব আননােন • রাস্তায় বেরিয়ে কেউ ভাবেন, আমাকে অন্যরা মারতে পারে। একে বলে ফিয়ার অব অ্যাটাক বাই আদার্স ও আবার একদল রয়েছেন যাঁরা রাস্তায় বেরতে ভয় - পান, কিন্তু কেন ভয় পান, সেই সম্বন্ধে কোনও সদুত্তরই দিতে পারেন না। এর নাম ফিয়ার অব নাে ক্লিয়ার রিজন। এরপর আসবে অ্যাংজাইটি কিয়ার বা প্যানিক ডিজঅর্ডারের কথা। এক্ষেত্রে। আক্রান্ত ব্যক্তি অবান্তর দুশ্চিন্তায় ভোগেন। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। একজন ব্যক্তির অফিসে ঢােকার সময় হল সকাল ১০টা। তাঁর বাড়ি থেকে অফিস অনতি দূর। তিনি ৯ টায় বাসে চাপলেই একদম সঠিক সময়ে অফিসে পৌছে যেতে পারেন। কিন্তু তিনি সকাল ৭টায় বাস স্টপে চলে আসেন। তাঁর। ভয়, তিনি ওই সময়ে না এলে বাস মিস হতে পারে, রাস্তায় জ্যাম থাকতে পারে ইত্যাদি।। কিছু মানুষের আবার শুচিবাই দোষ থেকে ভয়ের সৃষ্টি হয়। এই সমস্যাগ্রস্ত মানুষজন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার চাহিদায় অতিরিক্ত সময় ব্যয় করেন। ধরুন এরা বাসন মাজবেন। সেক্ষেত্রে বাসন মাজতে বসে দীর্ঘ সময় নেবেন। একবার-দুইবারের বদলে একটা বাসনে দশবার বা তার বেশি বার হাত বােলান। তাঁদের ভয়, ঠিকভাবে বাসন না মাজলে সেই বাসনে জীবাণু সংক্রমণ ঘটবে। এই জীবাণু সংক্রমণ থেকে পরিবারের সকলে আক্রান্ত হবে ইত্যাদি। এমনই দৈনন্দিন হাজারাে কাজে তাঁদের এমন সমস্যা
হয়।
এবার হাইট ফোবিয়ার কথায় আসা যাক। এই সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা উচ্চতাকে অহেতুক ভয় পান। উঁচু জায়গায় উঠলে তাঁদের ব্লাড প্রেশার এবং হৃদগতি বেড়ে যায়। অনেকক্ষেত্রে অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারেন। অনেকে আবার টানেল বা ছােট ঘেরা। জায়গার মধ্যে দিয়ে যেতে ভয় পান। একে বলে টানেল ফোবিয়া। এক্ষেত্রে ব্যক্তি টানেল। বা ছােট ঘেরা জায়গার মধ্যে যাওয়ার সময়
শ্বাসকষ্ট থেকে মৃত্যুর আশঙ্কা করেন।
কোনও জীবকে দেখে অহেতুক ভয় পাওয়ার ঘটনাকে জু ফোবিয়া বলা হয়। আরশোলা, টিকটিকি ইত্যাদি জীবের প্রতি ভয় এই। সমস্যারই অঙ্গ। এক্ষেত্রে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি কোনও নির্দিষ্ট জীবকে দেখে অত্যধিক ভয় পেয়ে চিৎকার, দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দেন। কিন্তু সত্যি হল, এই জীব গুলো থেকে সরাসরি তেমন কোনও শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কাই থাকে না। বিভিন্ন ভয়ের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি বিষয় হল ভূতের ভয়। এক্ষেত্রে ছােটবেলা থেকে ভূতের গল্প শোনা, অলৌকিকতায়।

বিশ্বাস, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণের বিচারে অজানাকে যাচাই না করার অভ্যেস ইত্যাদি এই ভয়ের অন্যতম কারণ। এক্ষেত্রে ব্যক্তি বিভিন্ন অলৌকিক ঘটনার প্রত্যক্ষ করার বিবরণ দিয়ে থাকেন। কিছু সময় কোনও একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি মানুষ থেকে ভয় অন্য মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। এর নাম ‘মাস হিস্টিরিয়া। আমাদের রাজ্যে প্রায়ই বহু ‘মাস হিস্টিরিয়ার ঘটনা ঘটছে। এই বছরখানেক আগেই একটি স্কুলে একদল ছাত্রী একসঙ্গে ভূত দেখছিল

কারা ভয় বেশি পায়?

না, ভয় পাওয়ার কোনও নির্দিষ্ট মানদণ্ড নেই। তবে বয়ঃসন্ধির ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ভয় পাওয়ার প্রবণতা থাকে কম। এই বয়সের বাচ্চারা সাধারণত সব কিছুকেই। বিচার করে গ্রহণ করার পক্ষপাতি হয়। • কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে?

চিকিৎসা কী?

• মূলত ইরর্যাশনাল ভয়ের চিকিৎসা দরকার। অনেকক্ষেত্রে ভয় সরাসরি ব্যক্তির প্রাত্যহিক কাজকর্মে প্রভাব ফেলে। তখন। অবশ্যই মনােবিদের পরামর্শ নিতে হবে।। লক্ষণ দেখামাত্রই চিকিৎসকের কাছে যাওয়াই মঙ্গল। এক্ষেত্রে চিকিৎসক রোগীর ভয়ের কারণগুলিকে বিচার বিবেচনা করে। ওষুধ এবং কাউন্সেলিং করার পরামর্শ দিয়ে। থাকেন। বেশিরভাগক্ষেত্রেই রােগী ভয় সম্পূর্ণ কাটিয়ে উঠতে পারেন। লিখেছেন সায়ন নস্কর।

কোন জীবকে দেখে অহেতুক ভয় পাওয়ার ঘটনা কে যু ফোবিয়া বলা হয়।
আরশোলা টিকটিকি ইত্যাদি জীবের প্রতি ভয় এই সমস্যার অঙ্গ।
➖➖➖➖➖➖
أحدث أقدم