জীবনানন্দ দাশের কবিতা
ভাড়াটে তােলার জন্য কাজে লাগবে। বীরেন্দ্র সেকথা শুনে বললেন, ‘পরে যদি সেই গুন্ডা উল্টে আপনাকে তােলার চেষ্টা করেন, তাহলে। কী হবে!’ শুনে ঘাবড়ে গেলেন জীবনানন্দ।। চেষ্টা করলেন আইনের পরামর্শ নেওয়ার। 'ভারতবর্ষ’ পত্রিকার সহসম্পাদক গােপালচন্দ্র রায় জীবনানন্দকে এক উকিলের কাছে নিয়ে গেলেন। তিনি সব শুনে বললেন, “যে ভাড়াটে। প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সময়ে ভাড়া দিয়ে দেয়, তাকে আইনত তােলা সম্ভব নয়। আপনি বরং পাড়ার লােকজন ডেকে প্রভাব খাটিয়ে কিছু করুন। জীবনানন্দ গেলেন ‘ভারতবর্ষ পত্রিকার সম্পাদক ফণীন্দ্রনাথ মুখােপাধ্যায়ের বাড়িতে। তিনি তখন
কংগ্রেসের বিধায়কও। সব কথা শুনে ফণীবাবু। বললেন, ‘আইনত ওই ভাড়াটেকে তােলা সম্ভব নয়। আর পুলিসও এমন কাজ করতে চাইবে। কিনা সন্দেহ। অতঃপর কী আর করা যায়। ওই ভাড়াটে মহিলা ছিলেন হিন্দুস্থান ইন্সিওরেন্সের এজেন্ট। সেখানকার পাবলিসিটি অফিসার ছিলেন। কবি সাবিত্রীপ্রসন্ন চট্টোপাধ্যায়। জীবনানন্দ তাঁর কাছে গিয়ে বললেন সব কথা। তিনিও শুনে নিজের অপারগতার কথা বললেন। ওই মহিলার সঙ্গে বড়কর্তাদের ভালােই দহরম মহরম। সুতরাং কিছু করা সম্ভব নয়। ভাড়াটের উপদ্রবে তিনি ক্রমেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। | কবির মৃত্যু বড়ই মর্মান্তিক। সন্ধ্যাবেলায়। হাঁটতে বেরিয়েছিলেন। এই শহরে আঁধারি সন্ধ্যায় হাঁটার সময়টা ছিল তাঁর একান্ত নিজস্ব আনন্দের। আপন মগ্নতার মধ্যে হারিয়ে যেতেন তিনি। মনে হতাে বুঝি ধানসিঁড়ি নদীর পাশ দিয়ে তিনি হেঁটে চলেছেন। মাথার উপর দিগন্ত বিস্তৃত নীল। আকাশ। চোখের সামনে ভাসে এক দূরতর দ্বীপ। বিকেলের মায়াবী আলােয় উঠোনে খেলা করে শিশু। ঘরে ফেরা পাখির ঠোঁটে খড়কুটো। এই আত্মমগ্নতার মধ্যে হারিয়ে যান মাঝে মাঝেই। সেদিন ঘটল সেই মর্মান্তিক ঘটনা। রাসবিহারী ট্রাম লাইন ধরে এগিয়ে চলেছেন তিনি। পিছনে। একটি বালিগঞ্জমুখী ট্রাম। আত্মমগ্ন কবি কিছুই বুঝতে পারলেন না। ট্রামটি এসে তাঁকে ধাক্কা । মারল। আহত ও রক্তাক্ত অবস্থায় কবিকে নিয়ে যাওয়া হল শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে। খবর। পেয়ে ছুটে এলেন ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়। ভেঙেছে কাঁধের হাড়, বুকের সাতটা পাঁজর। অনেক চেষ্টা চলল। দিন কয়েক পর থেকে অবস্থার ক্রমেই অবনতি হতে থাকল। ফুসফুসের অবস্থা খুবই খারাপ। তার ওপরে আবার নিউমােনিয়া। কথা। বন্ধ হয়ে গেল। অবশেষে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের ২২ অক্টোবর ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে গেল প্রাণস্পন্দন। সাতটি তারার আলােকপথে বিদায় নিলেন। ‘নির্জনতার কবি।।
➖➖➖➖➖➖
(জীবনানন্দ দাশ)