রোমান্টিক ভালবাসার গল্প

Valobashar Golpo Bangla | রোমান্টিক ভালবাসার গল্প


১. স্বত্ব সংরক্ষিত



প্রথম পর্ব-

আজ আমরা চলেছি ছত্তিশগড়ের মানা ক্যাম্প অঞ্চলে। আমাদের একটা ছোটো এনজিও আছে। আমরা মূলতঃ প্রান্তিক মহিলাদের স্বনির্ভরতার উদ্দেশ্যেই কাজ করে থাকি। তবে আজ চলেছি একটা অন্য উদ্দেশ্যে।

মানা ক্যাম্প হলো একটি বিখ্যাত অঞ্চল যেখানে দেশভাগের পরবর্তী বিভিন্ন সময় কাতারে কাতারে ঠাঁই নাড়া মানুষজন এসেছেন, একটু ঠাঁই পাবার আশায়। রায়পুরের কাছে রামায়ণের বিখ্যাত দণ্ডকারণ্য বনভূমিতে অবস্থিত মানা অঞ্চল। এটি ছিলো দীর্ঘকাল ভারত ভাগের ফলে পূর্ব বঙ্গ থেকে আগত বাঙালি হিন্দু শরণার্থীদের পুনর্বাসন দেওয়ার ট্রানজিট ক্যাম্প। অর্থাৎ লাখে লাখে আসা বাঙালি হিন্দুদের সকলকে যখন পশ্চিমবঙ্গে ঠাঁই করে দেওয়া সম্ভব হয়নি, তখন ভারত সরকার অন্যান্য জনবিরল অঞ্চলে ওনাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন। তবে পুনর্বাসনের জন্য
যথাযথ জমি জায়গা দিয়ে তাদের বসত ভিটা তৈরির আগে সকলকে ক্যাম্প করে অনেক দিন রাখা হয়েছিল। অনেককে ওই দণ্ডকারণ্য অঞ্চলের আশেপাশেই পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছিলো, আবার অনেককে ওখান থেকে অন্য প্রদেশে বা জেলাতেও পুনর্বাসিত করা হয়েছিলো। সরকারী ক্যাম্প থেকে সকলে চলে গেলেও রয়ে গেছিলো সহায়সম্বলহীন বিধবারা। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন বা পরিবারের সকলকে চোখের সামনে খুন হতে দেখা বিধবাদের কোনো আত্মীয় স্বজন ছিলো না, যে তাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। ভারত সরকার তাদের কয়েকজনকে পাঠালো কাশী, আবার কয়েকজনকে বৃন্দাবন। কিন্তু তার পরেও অনেকেই থেকে গেলেন মানা ক্যাম্পে। তাদের নামমাত্র বিধবা ভাতা এবং সামান্য রেশনের ব্যবস্থাসহ ওখানেই দরমার বেড়ার ঘর করে রেখে দেওয়া হলো। এরকমই একজনের কাছে যাচ্ছি আমরা। শুনবো তার গল্প। তার একসময় পরিবার পরিজন স্বামী সংসার সব ছিলো। কিন্তু দেশ ভাগ তার সব কেড়ে নিয়েছে। তবে তিনি বিধবার বেশে থাকলেও, এতো বছর পরেও নিশ্চিত নন যে তার পরিবার আদৌ মারা গিয়েছিলো কিনা। আমাদের যাওয়া সেই উদ্দেশ্যেই। যদি জীবন সায়াহ্নে থাকা একটি মানুষকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারি, এর থেকে বেশী আনন্দ বোধ হয় আর কিছুতেই পাওয়া যাবেনা। তবে এতগুলো বছর কেটে যাওয়ার পর হয়তো তাদের খুঁজে পাওয়ার আশা খুবই ক্ষীণ। তবুও একবার চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি কি!
ওনার কথা জানতে পারি আমরা একটা ডকুমেন্টারি থেকে। তারপর ওই ডকু ছবির পরিচালকের সাথে যোগাযোগ করে ওনাকে খুঁজে বার করি। তারপর স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় ওনার সাথে যোগাযোগ করি এবং অনেক কষ্টে রাজি করাই তার জীবনের সেই সব দিনের বিবরণ পুঙ্খানুপুঙ্খ দিতে। অনেক কষ্টে রাজি হন তিনি। তাই আজ চলেছি আমরা ওনার কাছে। রেকর্ড করবো ওনার সব কথা, তারপর মিডিয়া, ফেসবুক ইত্যাদির সাহায্যে যদি কিছু উপায় করা যায়, সেই আশাতেই চলেছি ওনার কাছে।

আমরা চলে এসেছি অনেকক্ষণ ওনার কাছে। ওনার দরমার বেড়ার ঘরে আমাদের টিমের এতো জনের স্থান সংকুলান করা বেশ কঠিন ব্যাপার হওয়ায়, আমরা ওনাকে নিয়ে এসেছি সামনে একটি গাছের তলায়। এখানে বেদী করা আছে, এই ক্যাম্পের সমস্ত বিধবারাই এখানে বিকেলে বা সকালে এসে বসেন; অনেকটা বাড়ির উঠোনের মতো। সেখানেই আমরা ওনাকে বসালাম। আমরা বসলাম ওনার পায়ের কাছে তিনটে চাটাই পেতে। ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম, "ঠাকুমা, শুরু করুন এবার। একদম বিয়ে থেকে শুরু করবেন কিন্তু। কিছু গোপন করবেন না। আমরা খুব করে তবেই চেষ্টা করতে পারবো আপনার পরিবারকে খুঁজে দিতে।"

বাঙালী আটপৌরেভাবে শাড়ি পড়া, গায়ের রং বা
চেহারা পরনের শাড়ির মতোই মলিন। উদাসভাবে আমাদের দিকে তাকিয়ে কোনো ভণিতা ছাড়াই তিনি শুরু করলেন,

"আমি অন্নপূর্ণা। বাপের ঘরের উপাধি সিলো চৌধুরী। স্বামীর ঘরের উপাধি সিলো যতো দূর মনে পড়ে সেন। জন্ম আমার 1933 সনে। ঢাকার ফরিদপুর জিলার নাম শুনসো তোমরা? ওই জিলাতেই বাসা ছিলো আমাগো। বাপের ঘরে নাম সিলো আন্নাকালী। আমরা সিলাম সয় (ছয়) বোন, আমি সব সাইতে সোটো! হয়তো তাই আমায় জন্ম দিয়া বাপ মাও হাঁপ সাইর‍্যা বাইচ্যাসিল! তাই আমার নাম রইলো আর-না-কালী।"

এই পর্যন্ত বলে বৃদ্ধার চোয়াল ভাঙা গালে হালকা হাসি ফুটে উঠলো। ওনার কথায় ঢাকার বাংলা ভাষার টান সুস্পষ্ট। আমাদের বুঝতে সেরকম অসুবিধা না হলেও, পাঠকবৃন্দের সুবিধার কথা ভেবে ওনার সাথে আমাদের কথোপকথনে ওনার কথ্য অংশটি আমাদের কলকাতার বাংলা উচ্চারণে তর্জমা করেই লিখবো। নিজের মনেই খানিক হেসে আবার শুরু করলেন তিনি-

" হ্যাঁ, কোথায় ছিলাম, আমার নামকরণে। বাপের ঘরে বেশ আদরেই বড় হচ্ছিলাম। আমাদের বাসা থেকে পদ্মা নদী কাছেই ছিলো, বর্ষাকালে নদীর জলের তীব্র গর্জন বাড়ি বসেই শুনতে পেতাম। আমার খুব প্রিয় বান্ধবী ছিল ফতিমা। ওদের বাড়ি ছিলো আমাদের বাসার দুটো বাড়ি পরেই। ওর সাথে সই পাতিয়েছিলাম কিভাবে জানো? আমার ছেলে পুতুলের বিয়ে দিয়েছিলাম ওর মেয়ে পুতুলের সাথে। তখন আমাদের বয়স ওই পাঁচ বছর, কি তারও কম। ঠিক মনে পড়ছে না। তবে ভাই হওয়ার আগেই, এটুকু বেশ মনে আছে। আমার বাবা ছিলেন কাছেই একটি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। আমার নাম আন্নাকালী রাখার পর মা - বাবার দুঃখ ঘোচাতে মা কালী আমাদের একমাত্র ভাই দিলেন, তখন আমার বয়স প্রায় সাত। আমি কখনো স্কুলে যাইনি। ভাই তিন বছর বয়সের হতে ওর যখন হাতে খড়ি হলো, বাবা ওকে পাশে নিয়ে স্লেটে পেন্সিল দিয়ে অক্ষর চেনাতেন, সেই তখনই একটু আমিও পাশে বসে দেখতাম। আমার বিদ্যের দৌড় ব্যাস ঐটুকুই। বয়স যখন দশে পড়লো, বিয়ের সম্বন্ধ দেখা শুরু হলো। কিন্তু অনেক সম্বন্ধই এসে শেষ পর্যন্ত আর টিকতো না। তার কারণ আমার সেজো কাকা ছিলেন কট্টরপন্থী কংগ্রেসের অনুগামী, সোজা বাংলায় বললে বিপ্লবী। নানা আন্দোলন, ব্রিটিশ বিরোধী কর্মসূচির সাথে তিনি ছিলেন প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত। শুধু তাই নয়, গোপনে উনি সুভাষ বসুর সাথেও যোগাযোগ রাখতেন, নানা খবর সরবরাহের অন্যতম মাধ্যম ছিলেন আমার কাকা। বেশ কয়েকবার জেলও খেটেছিলেন তিনি। ওনার কোনো রোজগারপাতি না থাকায় সেজো কাকিমা এবং খুড়তুতো ভাইবোনদের প্রতিপালনের দায়িত্ব ছিলো আমার বাবার। তাই তখন আমাদের বিশাল যৌথ পরিবার, পরিবারের সদস্য সংখ্যা নেহাত কম নয়। আমরা সাত ভাইবোন, বাবা- মা, সেজো কাকী তার নয় ছেলে মেয়ে। সকলের উপরে ছিলেন ঠাকুমা। সব মিলিয়ে আমাদের বাড়িতে তখন মোট কুড়ি জন সদস্য। সেজো কাকা আমাদের সাথে থাকতো না, রাতে কখনো সখনো লুকিয়ে চুরিয়ে এসে কাকিমার সাথে দেখা করেই ভোর হওয়ার আগেই আবার বেড়িয়ে যেতেন। সারা ভারত জুড়ে তখন স্বাধীনতার আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। সাথে চলছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। আমাদের গ্রামে যেটুকু খবর এসে পৌঁছয় তাতে জানতে পারি এইটুকুই যে সারা পৃথিবী জুড়ে মানুষের লাশ গুনে শেষ করা যাচ্ছে না। নিজের ছয়খান মেয়ে সাথে ভাইয়ের চারখান মেয়ের দায়িত্ব বাবার উপর থাকায়, বাবা বেশ ছোট থেকেই একে একে সকলকেই সুপাত্রে দান করছিলেন। আমার বেলাতেই শুধু অতো মুশকিলে পড়লেন। আমার কাকা যে জেল খাটা আসামী আমার আগের দিদির বিয়ে পর্যন্ত সেটি লুকিয়ে রাখা গেলেও, আমার বিয়ের পাত্র খোঁজার সময় কাকার নামে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার একটি লুক আউট নোটিস জারি করে, যাতে কাকার ছবি সহ মাথার দাম ঘোষণা করা হয়। এতে মোটামুটি সকলেই জেনে যায় যে বাবার সেজো ভাই দাগী আসামী। ফলস্বরূপ দুর্ভোগ হয় আমাদের। অনেক পাত্রপক্ষ নাকচ করার পরে হঠাৎ একদিন বাবা এক হাড়ি মিষ্টি নিয়ে বাড়ি ফেরে। জানতে পারি বাবার স্কুলের এক শিক্ষক তার ভাগ্নের জন্য পাত্রী খুঁজছে, বড় ভালো ছেলে। কলকাতায় পড়াশুনা করে, আসল বাড়ি যশোর জেলায়। ভালো বাড়ি, তারা মেয়ে দেখতে আসতেও চায় না। এমন পরিচিতের মধ্যে আর মেয়ে দেখার কোনো প্রয়োজন বোধ তারা করেননি। তখন আমার বয়স এগারো। সর্বসম্মতিক্রমে 1945 সালের বৈশাখ মাসে পাকা কথা এবং পাটি পত্র হয়ে গেলো। বিয়ের তারিখ ঠিক হলো 18ই অগাস্ট। আমার মনে তখন খুব আনন্দ। ফতিমা একদিন আমাকে জড়িয়ে ধরে খুব কেঁদে বললো, 'সই তুই চলে গেলে আমার মেয়েটাকে যে আর দেখতে পাবো না'। খুব রেগে গেছিলাম সেদিন ফাতিমার উপর। সইয়ের চলে যাওয়ার কোনো দুঃখ নেই, মেয়ে পুতুলের জন্য উনি কেঁদে আকুল হচ্ছেন!"
এই বলে আবার হেসে উঠলেন অন্নপূর্ণা দেবী। নিজের শাড়ির আঁচলের খুটটা সমানে আঙুলে জড়াতে জড়াতে বেশ খানিকক্ষণ আপনমনে হাসতে থাকলেন তিনি।
আমি জিগ্যেস করলাম, "তারপর? আচ্ছা আমার একটা কৌতূহল হচ্ছে, আন্নাকালী থেকে অন্নপূর্ণা কি করে হয়ে গেলো?"
প্রশ্নটা শুনে উনি আদুরে চোখে তাকিয়ে আবার হেসে উঠলেন। বললেন, " আমার স্বামী। উনি তো ছিলেন আধুনিক। কলকাতায় আইন নিয়ে পড়তেন। অবশ্যি যখন বিয়ে হয় আমাদের তখনও উনি ইন্টারমিডিয়েট দিচ্ছেন, তার এক বছর পর আইন নিয়ে পড়া শুরু করেন। তো সেই আধুনিক ছেলের এরকম একটা প্রাচীন পন্থী নাম নিয়ে সমস্যা অস্বাভাবিক ছিলো না। আমার নামে নিমন্ত্রণপত্র ছাপাতে গিয়ে ওনারা সামাজিক লজ্জা উপশমের উদ্দেশ্যে নিমন্ত্রণপত্রে আমার নাম পরিবর্তন করে ছাপলেন অন্নপূর্ণা। সেই থেকে আমি হয়ে গেলাম অন্নপূর্ণা। তবে আমার স্বামী সত্যিই ছিলেন দেবতার তুল্য। যে কটা দিন ওনার সান্নিধ্য পেয়েছি, আমি আজও ভুলতে পারিনা।" এই বলেই হাত দুটো জড়ো করে দেবতা বা স্বামী কোনো একজনের উদ্দেশ্যে কপালে তিনবার হাত ঠেকালেন।
আমি অধৈর্য হয়ে বলে উঠলাম, "ঠাকুমা তারপর বলুন, বিয়ের গল্পটা?"
উনি ম্লান হেসে বললেন, " বিয়ে, আসছি সে কথায়। বড়ই মধুর সে স্মৃতি।"

ক্রমশঃ


_________________

২. প্রেম পিপাসু

অনেক ক্ষন ধরে সাদ এর দিকে নিস্পলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে সারাহ্। মুখে এক মুগ্ধতার ছাপ।
মনোযোগ সহকারে সাদ এর কথা গুলো শুনছে...।
কি অমায়িক সুন্দর ভাবে কথা বলে ছেলেটা।
কি স্পষ্ট গলার স্বর । একবার শুনলে বারবার শুনতেই ইচ্ছা করে। চোখে চোখ রাখলে কেমন যেন ঘোর লেগে যায়।

সারাহ্ ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার এর ছাত্রী। অনেক দিন যাবৎ ডিপ্রেশনে ভুগছে সে। পারিবারিক ও ব্যক্তিগত জীবনে ঝড় ঝাপটা গুলো সামলাতে সামলাতে ডিপ্রেশনের শিকার হতে হয়েছে তাকে। দিনদিন শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছিল সারাহ্।
তাই বাধ্য হয়ে ওর বান্ধবী মারিয়াম ওকে নিয়ে শহরের এক নাম করা মনোবিদ ড. সাদ আহমেদের কাছে নিয়ে যায় ওকে। দেড় মাসে সাদের সাথে প্রায় ১০ টা সেশন ছিলো সারাহ্' র । এই কয়েক দিনে অনেকটাই বের এসেছে সারাহ্।

আজ ড. সাদ এর সাথে ১১ তম সেশন ছিল। অনেক ক্ষন ধরে ওর হা করে তাকিয়ে থাকা টাকে বেশ উপভোগ করছে সাদ। হঠাৎ কথা বলা থামিয়ে দিয়ে
মুচকি হাসি দিয়ে সারাহ্' র দিকে তাকালো সে।
নাহ্ , এখনও সেভাবেই তাকিয়ে আছে সারাহ্ ।
মুখে মোহনীয় এক হাসি।
এবার ওর চোখের সামনে তুড়ি মারলো সাদ।
"এই যে ম্যাডাম !! কোথায় হারিয়ে গেলেন? সাবধান! কোনো গভীর খাদে ডুব মেরো না কিন্তু আবার ।" ( সাদ)

এবার চমকে উঠলো সারাহ্। এভাবে বলাতে সে লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো। বেশ লজ্জিত হলো সে। ছীহ্ !! এভাবে কারোর দিকে কেবলার মতো তাকিয়ে থাকে কেউ!! সব সময় সাদ এর চোখের মধ্যে হারিয়ে যায় ও। আর প্রতিবার ই সাদ ব্যাপার টা লক্ষ্য করে ক্ষেপিয়ে তোলে ওকে।

"কোথায় হারালাম? মনোযোগ দিয়ে আপনার কথা শুনছিলাম সার। জানেন ই তো আমি কত মনোযোগী একটা বাচ্চা।" (সারাহ্)

"জ্বি জ্বি একটু বেশীই মনোযোগী। দুনিয়া উল্টে গেলেও আপনার মনোযোগ সরবে না। "
(সাদ)
সারাহ্ সারা চোখ পাকিয়ে সাদ দিকে তাকায়।
সাদ কিছু বলতে যাবে তখনি ও পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট এসে নক করল।
"স্যার এখনো হয়নি? নেক্সট ভিজিটরের সময় হয়ে গিয়েছে তো আসার।"
"হ্যাঁ হয়ে গেছে , আমাদের বল ভিতরে আসতে।"
"আমি আসছি স্যার। আসসালমুয়ালাইকুম।" (সারাহ্)
"ওয়ালাইকুম আসসালাম ইয়া রাহমাতুল্লাহি। টেক কেয়ার। অ্যান্ড ডোন্ট ফরগেট টু মেডিটেট টাইমলি। ওকে?" (সাদ)
"ওকে সার !" (সারাহ্)
মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে ও চলে গেল। সাদ কিছুক্ষন মুগ্ধ চোখে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।

বেরিয়ে এসে একা একা মুচকি হাসতে থাকলো সারাহ্। গাল দুটো আপেলের মতো লাল হয়ে যায়।
ক্ষেপে যাওয়ার ভান করলেও কেনো জানি সাদ এর টিজ করাকে অনেক ইনজয় করে ও। সপ্তাহে দুই দিন ওর সাথে সাথে থেরাপি সেশন থাকে। এই দুটো দিন সারার প্রিয় দিন। পুরো সপ্তাহ কদিন দুটির জন্য অপেক্ষা করে থাকে। সাদ এর সঙ্গ একটু বেশীই পছন্দ সারার।


এই তো দেড় দুই মাস আগেও সারাহ্ আত্মহত্যা করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল। তারপর মারিয়াম ওকে সাদ এর কাছে নিয়ে আসে। তারপর আস্তে আস্তে করে আবার বাঁচতে শিখে সারাহ্। সাদ ওকে জীবন কে গভীর ভাবে উপলব্ধি করতে শেখায়। সত্যিই চমৎকার একজন মানুষ ড. সাদ !!
এসব ভাবতে ভাবতে মারিয়াম এসে পড়ে ওকে নিতে।
"বাহ , আপনি দেখি আজকেও একা একা পাগলের মতো কেলাচ্ছেন! দেখি দেখি , আবার লাল ও হয়ে
গেছিস। ব্যাপার টা কি সারু হ্যাঁ? তোর হিরো কি এমন থেরাপি দেয় তোকে?" ( মারিয়াম)
" ইয়া আল্লাহ! মারিয়াম তুই আবার শুরু করলি? আমাকে না খেপালে তোর পেটের ভাত হজম হয় না , না? আর ' তোর হিরো ' মানে টা কি? উনি তোর কাজিন হয় ।" (সারাহ্)
"উনি প্রত্যেক সেশন এর পর কাশ্মীরি আপেল হোয়ে বের হবেন আর আমি কিছু বলতেও পারবো না!! এটা কোথাকার বিচার বোন? " ( মারিয়াম)

"হইসে তোর? তাইলে চল এখন আল্লাহর ওয়াস্তে।
আসর এর আযান দিচ্ছে। যেতে যেতে আমার নামায কাযা হয়ে গেলে কিন্তু তোর খবর আছে!! " (সারাহ্)

যত যাই হোক না কেন , নামায কাযা করা সারার একদম পছন্দ না। তাই মারিয়াম তাড়াতাড়ি ওকে বাসায় পৌঁছে দিল।
আস্তে আস্তে সারাহ্ কে স্বাভাবিক হতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো মারিয়াম। বড্ড ভালোবাসে সে সারাহ্ কে। আর ভালো বাসবে নাই বা কেনো? সেই ছোট বেলা থেকে ওর সব সুখ দুঃখের সখী সারাহ্। সব সময় ওর পাশে থেকেছে। সারাহ্ থেকেই ও বুঝেছে বন্ধুত্বের মর্ম। আপন বোনের মতো স্নেহ করে ও সারাহ্ কে। ওকে এভাবে ভেঙ্গে পড়তে দেখে মারিয়াম ও অনেক টা মুষরে পড়ছিল। তাই তো ওর দূর সম্পর্কের চাচাতো ভাই সাদ আহমেদের কাছে নিয়ে যায় সারাহ্ কে দেড় মাস আগে।

চলবে।

অনেক সাহস করে প্রথম গল্প টা প্রকাশ করলাম। আমি কোনো রাইটার না। কিংবা আগে লেখালেখির শখ ও ছিলো না। প্রতিলিপি তে গল্প পড়তে পড়তে খুব ইচ্ছা করলো গল্প টি প্রকাশ করার।
এর আগে কখনো কোনো গল্প লেখা হয়নি।
তাই ভুল ক্রুটি গুলো ক্ষমা করবেন। আর হ্যাঁ রিভিউ দিতে ভুলবেন না কিন্তু। 😌

সমাপ্ত
________________________
Previous Post Next Post