Bangla Best Love Story (বাংলা ভালবাসার গল্প ফিরে পাওয়া)

ছোট গল্প

ফিরে পাওয়া


যত কাজই থাকুক সকালে খানিকটা সময় শ্রেয়সী ওদের ফ্ল্যাটের বারান্দায় এসে দাঁড়াবেই, পাশেই একটা ছোট প্লেস্কুল আছে , কচি কচি বাচ্চা গুলোকে নিয়ে ওদের মায়েরা আসে স্কুলে পৌঁছে দিতে, কি স্বর্গীয় দৃশ্য... বাচ্চাগুলোর কলধ্বনি শুনতে থাকে শ্রেয়সী। কী মিষ্টি .,. কি মিষ্টি সেই কচি কচি কণ্ঠস্বর , প্রাণভরে দেখতে থাকে ওদের..বাচ্চারা ক্লাস রুমে ঢুকে যাবার পরে ও আবার ফিরে যায় সংসারের কাজে, কিন্তু সারাক্ষণ কানে গুণগুণ করে বাচ্চাগুলোর কলধ্বনি ।সব কাজ তাড়াতাড়ি সেরে নেয় ওদের ছুটি হবার আগেই , ওদের ছুটির ঘন্টা শুনলে আবার বারান্দায় বেরোয় , মুগ্ধ চোখে ওদের দেখতে থাকে.. যেন একঝাঁক রঙ্গীন প্রজাপতি ,ওরা চলে গেলে মন টা খারাপ হয়ে যায় শ্রেয়সীর ... আবার সব ফাঁকা লাগে । পনেরো বছর আগে ওর বিয়ে হয়েছে সব্যসাচীর সঙ্গে .. বড় চাকরি করে সে ....অর্থ , যশ,বাড়ি, গাড়ি কোন কিছুরই অভাব নেই কিন্তু অভাব শ্রেয়সীর অন্তরে , সব কিছু থেকেও কিছুই যেন নেই । অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা , অনেক চিকিৎসা ... সব চেষ্টা করেও হার মেনেছে.. সন্তান লাভ হয় নি ।তখন শ্রেয়সী চেয়েছিলো দত্তক নিতে , কিন্তু ওর শ্বাশুড়ী এবং সব্যসাচী কেউই রাজী হয় নি, ওদের বক্তব্য ছিলো যে বাচ্চার শরীরে অন্য লোকের রক্ত বইছে তাকে সন্তানের স্বীকৃতি দেওয়া যায় না ,সেই কারনে শ্রেয়সীর জীবন শূন্যই থেকে গেছে, কোন শিশুর কন্ঠস্বরে ওর সাজানো সংসার মুখরিত হয়ে উঠতে পারে নি। শ্রেয়সী দেখে সবিতা, ওর কাজের লোক, যখন ওকে নিজের ছোট্ট বাচ্চার দুষ্টুমির গল্পে করে তখন ওর মুখটা কেমন উজ্জ্বল দেখায় ।শ্রেয়সির বুকটা তখন মুচড়ে ওঠে ভাবে ও তো কোনদিন কারুর কাছে এইরকম করে নিজের সন্তানের গল্প করতে পারবে না । সবিতার বড্ড অভাবের সংসার, দুবেলা দু মুঠো ভাত জোগাড় করাও খুব কষ্টসাধ্য, ওর বর নেশা করে সব টাকা উড়িয়ে দেয়, কিন্তু তবুও ও পাঁচ বাড়ি কাজ করে বাচ্চাটাকে বড় করে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করছে ।শ্রেয়সী প্রতিমাসের মাইনের সঙ্গে ওকে কিছু টাকা এক্সট্রা দেয় বাচ্চার জন্য দুধ কেনার জন্য !সবিতার মুখে ওর বাচ্চার গল্প শুনতে শ্রেয়সীর খুব ভালো লাগে কিন্তু কিছুদিন হলো সবিতা কাজে আসছে না .... বলছিলো পেটে খুব যন্ত্রণা,একদিন দুপুরে হঠাত্ সবিতা এসে বললো "বৌদি আমি আর বাঁচবো না গো ডাক্তার না কি সন্দেহ করছেন এটা নাকি ক্যান্সার ! বৌদি গো আমি মরে গেলে আমার বাচ্চাটা তো ভেসে যাবে গো ! বৌদি গো তোমার পায়ে ওকে এট্টু আশ্রয় দাও না গো, ও তাহলে বেঁচে যাবে গো বৌদি "! শ্রেয়সী বললো " আমাকে একদিন সময় দাও , আমি তোমায় জানাবো সেদিন সব্যসাচী অফিস থেকে ফেরার পরে শ্রেয়সী ওকে সব ঘটনা জানিয়ে বললো " আমরা যদি বাচ্চাটাকে দত্তক নিই, আমাদের শূণ্য জীবন পূর্ণ হয়ে উঠবে গো, আর সেই সঙ্গে বাচ্চাটাও আর অনাথ হয়ে যাবে না! " কিন্তু সব্যসাচীর অহংকার শ্রেয়সীকে সেই অনুমতি দিলো না সেই রাতে শ্রেয়সী দু চোখের পাতা এক করতে পারলো না, জেগে কাটালো পুরো রাত, চোখের জলে বালিশ ভিজে গেলো ওর , সকালবেলা প্লেস্কুলের খালি মাঠের দিকে তাকিয়ে ওর মনটা হুহু করে উঠলো ।আকাশে গোলাপি সূর্যের দিকে তাকিয়ে ওর মনে একটাই প্রশ্ন এলো কি লাভ এই শূণ্য জীবনটা বয়ে বেরিয়ে ? এতো বড় জীবনটা ও কি ভাবে কাটাবে ? সব্যসাচীও যে একটু একটু করে দূরে সরে গেছে , শ্রেয়সী তাকে সন্তান দিতে অপারগ বলেই হয়তো এতো নির্লিপ্ত হয়ে হয়ে গেছে সে ।

সেদিন বিকেলে আবার সবিতা এলো, বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে , ওর চেহারা একদম ভেঙ্গে গেছে । বাচ্চাটাকে দেখে শ্রেয়সীর দু চোখ জলে ভরে উঠলো , কী মায়াভরা টুলটুলে একটা নিষ্পাপ শিশুমুখ, ও পরম মাতৃস্নেহে ও বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিলো... বাচ্চাটাকে বুকে জড়িয়ে ধরতেই ও অপরিসীম সাহস আর দৃঢ়তা খুঁজে পেলো মনে, প্রতিজ্ঞা করলো এই শিশুটিকে ও সর্ব শক্তি দিয়ে আগলে রাখবে, সবিতাকে দৃঢ়স্বরে বললো, চিন্তা করোনা , আজ থেকে ও আমার সন্তান, ওর সব দায়িত্ব আমি নিলাম ,সবিতার অসুস্থ চেহারায় খুশির আভাস ফুটে উঠলো , নিশ্চিন্ত হলো ও । সেদিন সব্যসাচী অফিস থেকে ফিরে এসব কান্ড দেখে খুব বিরক্ত হলো, ওকে বললো পরের দিনই সকালে বাচ্চাটা ফেরত দিয়ে আসতে ।শ্রেয়সী অবাক হয়ে গেলো সব্যসাচীর এই নিষ্ঠুরতা দেখে,ও কোন জবাব না দিয়ে পাশের ঘরে চলে গেলো বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে পরের দিন সকালে শ্রেয়সী স্নান সেরে বাইরে যাবার জন্য তৈরি হয়ে নিলো, বাচ্চাটাকেও নতুন জামা পরিয়ে তৈরি করে নিলো .. তারপর ওকে কোলে নিয়ে সব্যসাচীর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো , খুব দৃঢ়স্বরে বললো "আজ থেকে ও আমার একার সন্তান , ওর নাম দিলাম শ্রেয়ান । আর ওকে নিয়ে আমি চলে যাচ্ছি ,যেখানে আমার শ্রেয়ানের জায়গা নেই, সেখানে আমিও আর থাকবো না ।সব্যসাচী নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলো না ... এই কি সেই শ্রেয়সী ? যে কোনদিন ওর কথার অবাধ্য হয় নি ! এ কোন শ্রেয়সী , একে তো সব্যসাচী চেনে না , ওর এই রূপ যে সম্পূর্ণ অচেনা ! যেন মা দুর্গার মাতৃমূর্তি ! সব্যসাচী দেখলো শ্রেয়সী দরজার দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে আর বুকের কাছে পরম যত্নে আঁকড়ে ধরে রেখেছে বাচ্চাটিকে ,দরজার বাইরে পা রাখতেই শ্রেয়সী শুনতে পেলো সব্যসাচী ওকে ডাকছে , বলছে যেও না শ্রেয়সী .. আমি এতোদিন ভুল ছিলাম, আমি কোনদিন তোমার কথা ভাবিনি, শুধু নিজের জেদকেই প্রাধান্য দিয়েছি ।আমায় ক্ষমা করে দাও ।আজ থেকে শ্রেয়ান তোমার, আমার দুজনেরই সন্তান ! শ্রেয়সী ফিরে তাকালো... ওর চোখে জল আর ঠোঁটে এক গর্বিতা মায়ের বিজয়ী হাসি।

___________________
Previous Post Next Post