হাঁপানি রোগের চিকিৎসা
(Hapani) হাঁপানি থেকে মুক্তির উপায় কি? | হাঁপানি রোগের চিকিৎসা

হাঁপানি থেকে মুক্তির উপায় কি?


হাঁপানি অসুখটি ঠিক কী ?

( ডঃ আলোকগোপাল ঘোষাল )

এককথায় বলা চলে শ্বাসনালির সংকোচন৷ আর তার ফলে শ্বাস নিতে সমস্যা হওয়া। লজ্জাবতী লতা যেমন স্পর্শ মাত্রই গুটিয়ে যায়, তেমনি হাঁপানি রোগীর শ্বাসনালিও আপনাআপনি বা সামান্য উসকানিতে সংকুচিত হয়ে যায়। কিন্তু এই সংকোচনটা আসলে একটা পরিণাম। চিকিৎসা শুরু হতে যত দেরি হয়, ততই রোগীর ক্ষতির বিষয়টা স্থায়ী হতে থাকে। তাই যত দ্রুত রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া যাবে, ততই মঙ্গল।
মনে রাখতে হবে, হাঁপানি বা অ্যাজমা অসুখটা আসলে অনেক সময়ই অ্যালর্জি বা শরীরের অতিরিক্ত সংবেদনশীলতার প্রকাশ। অ্যালার্জি নানারকমের হয় কারও কিছু কিছু খাদ্যে অ্যালার্জি থাকে। সেই খাবারগুলো খেলেই নানাভাবে অ্যালার্জির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। কারও ত্বকে চুলকানি হয়। কারও বমি অথবা ডায়ারিয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেয়। কারও কারও আবার শ্বাসকষ্ট  শুরু হয়। তবে অ্যালার্জির কারণ যে শুধু খাবারই হতে হবে এমন নয়। অ্যালার্জি থাকতে পারে ধুলো, ধোয়ায়, বাতাসে ভেসে বেড়ানো ফুলের পরাগরেণু থেকেও।

লক্ষণ

একটানা শুকনো কাশি।
দমবন্ধ হয়ে আসছে এমন মনে হয়।
রোগীর শ্বাসের টানের সঙ্গে বা কাশির সঙ্গে সাঁই সাঁই আওয়াজ ওঠে।
ঠান্ডা আবহাওয়ায় শ্বাসের টান বেড়ে

কাদের হয়, কেনই বা হয় —
বয়স বা লিঙ্গভেদে এই রোগ আসে না।কারও ৩৫ বছর বয়সে হাঁপানি প্রকাশ পায়। কারও বা পাঁচ বছরে। বস্তুত কার কখন হবে সেটা চট করে বলা সম্ভব নয়। আর কিছুই নয়, হাঁপানি অসুখটাই বংশগত। অর্থাৎ হাঁপানি রোগীর কাছে খোঁজ নিলেই জানা যাবে,  তাঁর পরিবারে কারও না কারও হাঁপানির সমস্যা রয়েছে। অথবা দাদু ঠাকুমা-দিদার হাঁপানির সমস্যা ছিল। নিকটাত্মীয় কারও হাঁপানির সমস্যা ছিল বা আছে। তবে বংশে থাকলেই যে বহিঃপ্রকাশ ঘটবে,  এমন মানে নেই কিন্তু ঠিক ঠিক পরিবেশের সহযোগ হবে। ধরা যাক দুই যমজ ভাই  হিন্দি ছবির ধাঁচে খুদেবেলায় মেলায় হারিয়ে গেল একজন গেল খুব শুকনো পাথুরে এলাকায়, একজন রয়ে গেল আর্দ্র শস্যশ্যামলা বাংলায়। হতেই পারে বাংলার মাটি, পরিবেশের হাঁপানিতে ভুগবে, অন্যজন সারাজীবন টেরই পাবে না। মোটামুটিভাবে বলা যেতে পারে অসুখটির ষাট শতাংশ বংশগতির কারণে হয় বাকি চল্লিশ শতাংশের জন্য দায়ী পরিবেশ।

উপায় কী?

বেশিরভাগ রোগীই ভাবেন সমাজের মানুষ কী বলবে, হীনম্মন্যতায় ভুগতে শুরু করেন। অদ্ভুত দোলাচল, হাঁচি থেকে কাশি, তার থেকে শ্বাসকষ্ট, রোগী প্রাণপণ চেষ্টা করছেন সত্যকে অস্বীকার করার। চিকিৎসাতো হচ্ছেই না,  এমনকী রোগনির্ণয়ও না। ক্রমশ খারাপ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে রোগীর অবস্থা অর্থাৎ হাঁপানির জন্য রোগী যে কষ্ট পান, তার কারণ অসুখ নয়, অজ্ঞানতা।

চিকিৎসা: 

গোলাপকে লোকে গোলাপই বলে। কোদালকে কোদাল। তাই হাঁপানিকে হাঁপানিই বলতে হবে। রোগীকে আগে নিজেকে স্বীকার করতে হবে যে তাঁর একটা সমস্যা হয়েছে। এই সমস্যার নিরাময়ের লড়াইটা দীর্ঘ। বিভিন্ন ধরনের মিথ বা ভুল
ধারণাগুলোরও নিষ্পত্ত হওয়া দরকার। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়-হাঁপা চিকিৎসায় ইনহেলার শুনলে লোকে চমকে ওঠে। লোকের ধারণা ইনহেলার নেওয়া শত করলে আর থামা যায় না। হাঁপানি মানেই কন্তু ইনহেলার থেরাপি নয়। জীবনযারার সামান্য অদলবদল করলে হাঁপানির সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া যায়। আগে সেদিকটা সম্পর্কে বলি। অতর্কিতে বাতে হাঁচি, কাশি শুরু হচ্ছে, আর থামতে চাইছে না। এমন হলে সতর্ক হোন। ধুলো, ধোঁয়া, তামাক, যেসব খাবার থেকে অ্যালার্জি হয়, সেগুলি বর্জন করুন। বাইরের ধানের থেকে ঘরের ধুলো অনেক বেশি ক্ষতিকর। সেই সঙ্গে আছে ডার্মাটোফাইট নামে অসংখ্য কীট, যা আপনারই বিছানায় জন্মায়, বড় হয়, বংশবৃদ্ধি করে এবং মারা যায়। এরা অ্যালার্জি হওয়ার অন্যতম কারণ। তাই বিছানার চাদর ও বালিশের ওয়াড় সপ্তাহে অন্তত একদিন ফুটন্ত জলে কাটুন। শোয়ার ঘরে কোনও কার্পেট রাখবেন । কুকুর, বিড়াল, পাখি, বনসাই যেন শোয়ার ঘরে না থাকে। এছাড়া বাইরের খুব গরম থেকে ঘরের বা শীতাতপনিয়ন্ত্রিত অফিসের ভিতরে ঘনঘন যাতায়াত বন্ধ করুন। খাওয়ার পরেই শুয়ে পড়বেন না। অন্তত একঘণ্টা অপেক্ষা করুন। না হলে কিছু খাদ্যকণা শ্বাসনালিতে ঢুকে উত্তেজক হিসাবে কাজ করতে পারে। বংশে কারও হাঁপানি আছে জানতে পারলে এবং এখনও পর্যন্ত সুস্থ সদস্যের হাঁপানি শুরু নাহলে, এই নিয়মগুলো মানতে শুরু করুন। সেক্ষেত্রে হাঁপানির সমস্যা দেখা দেবে না চট করে। তবে যদি একান্তই দেখা দিয়েই দেয় এবং তা মারাত্মক আকার ধারণ করে সেক্ষেত্রে ইনহেলার নিতেই হবে। বলে রাখি,  ইনহেলার আজব কোনও ওষুধ নয়। শ্বাসকষ্ট কমানোর জন্য বাজারে বহু সিরাপ, ট্যাবলেট পাওয়া যায়। ইনহেলার সেই একই ওষুধ। ট্যাবলেট, সিরাপ খাওয়ার পর রক্তে মিশে তারপর আক্রান্ত অংশে যায়। এতে কিছুটা সময় লাগে। অনেকটা ওষুধ নষ্টও হয়। বেশি কিছু অঙ্গেও ওই ওষুধ ঢোকে। ফলে কিছু পাশ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সরাসরি আক্রান্ত অংশে ওষুধ ঢেকে ইনহেলারে। এতে রােগী দ্রুত আরাম পান। তাছাড়া ট্যাবলেট হয়। মিলিগ্রামে তার হাজারভাগের কম ভাগ। মাইক্রোগ্রামে ইনহেলার ওষুধটাকে পৌঁছে দেয় শ্বাসনালিতে। কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় না। রোগ সারিয়ে তুলতে সুবিধা হয়।

ইনহেলার এর ধরন

হাঁপানির রোগীকে সাধারণত  দু'ধরনের ইনহেলার ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। খুব শ্বাসকষ্ট হলে রোগী নেবে সালবিউটামল ইনহেলার। আর নিয়মিত নেবে স্টেরয়েড। মনে রাখবেন, এই স্টেরয়েড পরিমাণে সামান্যই। প্রশ্ন হল, এই স্টেরয়েড কি সারাজীবন নিতে হবে?
উত্তর হল, না। রোগীর ভালো থাকার উপর নির্ভর করে ইনহেলার নেওয়া বন্ধ বা মাত্রা কমানোর বিষয়টি শীতকাল আর হাঁপানি।  হ্যাঁ, কথাটা কিছুটা সত্যি  বাতাসে। ধুলোর পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে। এমন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে সাবধান। থাকলে কষ্ট হবে না। হাঁপানি আর সিওপিডি-এর পার্থক্য শ্বাসকষ্ট মানেই কিন্তু হাঁপানি নয়। আমরা মোটেই সচেতনভাবে শ্বাস নিই না।। শরীরের অনৈচ্ছিক পেশিগুলোর সাহায্যে শ্বাস প্রশ্বাস ক্রিয়া অবিরত হয়ে চলেছে। মস্তিষ্ক এই ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। এটাই শরীরের নিয়ম। মুশকিল হল, যখন কেউ বুঝতে পারে যে তাকে শ্বাস নিতে হচ্ছে এবং তা বেশ চাপ প্রয়োগ করেই, তার মানে ওই ব্যক্তির শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে গিয়েছে। ইংরেজিতে একে বলে, লেবার্ড ব্রিদিং। পরিশ্রম করে শ্বাস নিতে হচ্ছে শ্বাস নিতে সমস্যা হওয়ার  পিছনে অনেক কারণ দায়ী থাকে। শরীরে রক্তাল্পতা থাকলে, হার্টের সমস্যা থাকলেও শ্বাস নিতে সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে বেশিরভাগ লোকেই জানে ফুসফুসের অসুখ থাকলে শ্বাস নিতে সমস্যা হয়। তবে ঠিকভাবে বলতে হলে, ফুসফুসের সমস্যার জন্য শ্বাসকষ্ট হওয়ার চাইতেও লোকে বেশি ভোগেন শ্বাসনালির সংকোচনের জন্য শ্বাসনালির সংকোচন। আবার দুটি কারণে হতে পারে  প্রথমটা হয় লজ্জাবতী পাতার মতো। স্পর্শ করা হল, আর গুটিয়ে গেল। তেমনই সামান্য উদ্দীপক বস্তুর সংস্পর্শে আসা মাত্র শ্বাসনালি সংকুচিত হয়ে যায়। তবে কিছুক্ষণ পর ধীরে ধীরে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় আসে। এই অবস্থাকেই অ্যাজমা বা হাঁপানি বলে জানি। আর একটা অবস্থা আছে। ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ-এ শ্বাসনালি সংকুচিত হয়ে গেলে তা ফেরানো সম্ভব নয়। এই অসুখ মোটেই ভালো নয়। ' প্রধান কারণ হল ধূমপান, এছাড়া বায়ুদূষণ,  উনুনের ধোঁয়ায় প্রতিদিন শ্বাস নিলে এমন হয়।

( বলে রাখি ইনসুলিন আহব কোনও ওষুধ নয়। শ্বাসকস্ট কমানোর জন্য বাজারে বহু সিরাপ, ট্যবলেট পাওয়া যায়। ইনহেলার সেই একক ওষুধ।)

➖➖➖➖➖➖➖➖➖
Previous Post Next Post