Bengali Short Story (বাংলা ছোট গল্প)

Bengali Short Story (বাংলা ছোট গল্প)

আনন্দ সংবাদ 

দেবাশিস দন্ড

আগাপাছতলায় যখন নামলাম টপাস টপাস বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। পড়ছে আর ফাটছে। জলের ফুলকি ছড়াচ্ছে। ফাটলে সবাই ফুলকি ছড়ায়। মানুষ তাে মানুষ, আগুন তাে আগুন, জল তাে জল। সেই ভাের পাঁচটায় বেরিয়েছি। তিনবার বাস বদল। বাস বদল তাে নয়, বাসা বদল। যা হ্যাপা। এক বাস থেকে নেমে বাস পাই-না পাই-না, বকের মতাে ঠায় দাঁড়িয়ে। তারপর চাট্টি মুখে দেব বলে যেই দোকানমুখাে হলাম, প করে বাস চলে এল। নে, কত খাবি খা। ভাগ্যিস নােনতা বিস্কুট ছিল।  আমি যে সেলিব্রিটি, আমি যে কাল পকা নাদনের চেয়ে বিলকুল আলাদা ধাতুর মাল, এই বিশ্বাসটা বইতে বইতে যখন ল্যাংচাতে শুরু করলাম তখনই পেয়ে গেলাম অফারটা।  সেই হ্যাঁচকা টানেই চলে এলাম আগাপাছতলা। আগার কথা পরে এবার একটু গােড়া ধরে টানি। যদিও মানুষটা আমি সােজাসাপটা, তবু বাঁকাট্যারা কথাগুলাে আজন্ম আমার জিভের ডগায় ধেই ধেই করে নাচে। সেসব শুনে আমার বন্ধু-পড়শিরা হ্যা হ্যা করে হাসে, হাসতে হাসতে চেয়ার উলটোয়। ওরাই একদিন টানতে টানতে দাঁড় করিয়ে দিল একটি ভুবন ভােলানাে টিভি চ্যানেলের অডিশনে। মার্কেটে কমেডি শাে নামাবে। নাম রেখেছে হাঁসফাঁস। তার অডিশন। শয়ে শয়ে হাসিওয়ালারা ত্যাবড়া মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে লাইনে। হাসাতে এসে হাসি উড়ে গেছে। | চ্যানেল আমাকে চান্স দিল। স্বপ্নের গাদায় ফেলে দিল। চকরবকর জামা পরিয়ে লাইট ক্যামেরা অ্যাকশন করে ছেড়ে দিল। এপিসােডের পর এপিসােড়
ভেসে গেল জাজদের প্রবল প্রশংসা আর উত্তাল উচ্ছ্বাসে। সেসব প্রশংসায় কত ভ্যাবাচ্যাকা স্বপ্নের স্বরলিপি। ওনারা অন ক্যামেরায় রটিয়ে দিলেন, আমি দেশের প্রথম শ্রেণির কমেডিয়ানদের একজন। একবার এক ঝানু ডিরেক্টর গেস্ট হয়ে এসেছিলেন মনখারাপমার্কা মুখ। তাকেও হাসিয়ে ছেড়ে দিলাম। উনি কথা দিলেন আগামী প্রত্যেকটা ছবিতে আমার রােল বাঁধা। হােস্ট তাই শুনে আমাকে পকাম পকাম করে চুমু খেল। ঢ্যান ঢ্যান করে মিউজিক ফেটে পড়ল মাত্রাছাড়া ডেসিবেলে। আমার মাথাটা খারাপ হয়ে গেল। চোখে জল এসে গেল। কাজল ভেদরে কান অব্দি উঠে গেল। মেকআপ ম্যান বাঁধনদা আবার বাঁধিয়ে দিল। কান্না ততক্ষণে শুকিয়ে কাঠ। কমেডির ডিরেক্টর শুভদা বললেন, ইয়াকশন। আবার কাঁদো। যাত্তারা!
চার মাস পর রিয়েলিটি শােয়ের ধাঁধানাে মঞ্চ থেকে ফিরে এলাম আমার ময়রাবাড়ির আস্তানায়। অটোগ্রাফ বিলােতে বিলােতে এলাম। ফ্যান ফলােয়ারদের ইড়িং বিড়িং প্রশ্ন সামাল দিতে দিতে এলাম। চার মাস চ্যানেলের বিরিয়ানি সাটিয়ে চলায় বলায় কায়দা এসেছে। কালু নাদনরা পুরাে ঘাবড়ে গেল। তুই-তােকারি করত, তুমি তুমি শুরু করে দিল। মগজে আমার স্বপ্ন ঠাসা। কড়ি হয়ে কুঁকড়ে আছে। দল ফুল ফুটবেই। আগে সাইকেল টানতাম। একটা সেকেন্ডহ্যান্ড বাইক নিলাম। তেল জোটাতে হিমসিম। তা তােক, সেলিব্রিটি তাে। একবার-দুবার কলকাতা ছুটলাম। এমনিই ছুটলাম।
পাড়ায় এসে মীরদা, খরাজদা করে ঠেক গরম করে দিলাম। পাড়ায় ফাংশন হল। আমাকে ডাকল। অন্য একটা শো- এর বাহানায় কাটিয়ে দিলাম। ব্যাটারা পয়সা ছড়াবে না। অজ্ঞাতবাসে পড়ে রইলাম একটা গােটা সন্ধ্যা। প্রথম প্রথম বেশ কয়েকটা শাে পেয়ে গেলাম। পকেটে কাঁচা টাকা এল। কাঁচা খরচায় ফিনিশ হয়ে গেল। দু-মাস পর চ্যানেল আবার নামাল সেই শাে। নতুন এক ঝাঁক মুখ এল। তারা এসে বাজার খেয়ে ফেলল। আমি হাওয়া । হাওয়া তাে হাওয়াই। পায়ে হাওয়াই চম্পল, হাতে চটের থলে। থলের ভিতর এক গাছি ধনেপাতা, এক পাে চ্যালামাছ। আমি আবার আমিই হয়ে গেলাম। পাঁচ বছর পর বুঝলাম, ফুরিয়ে যাইনি। এখনও দেওয়ার আছে। রজনীকান্ত ফিল্ম ইউনিভার্সিটি আমাকে গ্রুমার হিসেবে চাইছে। চিঠির তলায় পথনির্দেশ ছিল। মিলিয়ে মিলিয়ে চলে এসেছি। সবে সাড়ে দশটা বাজে। এখনও হাতে আধ ঘণ্টা। এত তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাওয়া ঠিক হবে না। একটা চায়ের দোকানে ঢুকে পড়লাম। এই গেয়ে দোকানগুলাের অদ্ভুত একটা লাবণ্য আছে। বাঁশফালির বেঞ্চ, কালচে কেটলি, সস্তা পাউরুটি। বুড়াে দোকানদার এক মনে পকোড়ি ফুলুরি ঘেঁকে যাচ্ছে। ছাঁকছে আর ঝন ঝন করে নামাচ্ছে। কোনােদিকে হৃক্ষেপ নেই। ত্রিসীমানায় কেউ নেই। কে কিনবে কে খাবে ঠিক নেই। অভ্যাসেই ভেজে চলেছে। আমি চা আর যতরকম ভাজাভুজি নিয়ে _ তরিবত করে বসলাম। বিল শেষ অব্দি সাড়ে বারাে টাকা। পঞ্চাশ পয়সা খুচরাে না থাকায় আরও এক মুঠো পকোড়ি ধরিয়ে দিল বুড়ােটা।
দুরপ্রান্তে গ্রামগুলিতেও এখন শহুরে হাওয়া ঢুকছে। শিরীষ গাছে ঝলছে সােনালি ভবিষ্যতের সাইনবাের্ড। আনন্দ সংবাদ আনন্দ সংবাদ। বাংলা সিরিয়াল/ফিমে অভিনয় করে আনলিমিটেড উপার্জন করতে চান? রেডিয়াে/ টেলিভিশনে অ্যাঙ্কার/ নিউজ রিডার হতে চান? আজই চলে আসুন। শিক্ষান্তে চান্স অনিবার্য। এ বিঃ দ্রঃ প্রতি শনিবার বিনামূল্যে ব্রেক ডান্স শেখানাে না হয়। প্রশিক্ষণ দেবেন টিভি ও ফিল্ম দুনিয়ায় নামি-দামি তারকারা। রজনীকান্ত ফিল্ম ইউনিভার্সিটি।  ইউনিভার্সিটি মানে বারাে বাই চোদ্দো ফুটের একটা আধপাকা বাড়ি। উপরে অ্যাসবেস্টস। তাতে লাউয়ের লতা ফন ফন করছে। দেয়ালে রজনীকান্তের মুখ আঁকা ছিল। মুখে সিগারেট ছিল। চোখে ভূত ভূত চশমা। সেই মুখের উপর কে বা কারা ‘বিপুল সেনকে বিপুল ভােটে জয়যুক্ত করুন’ লিখে গেছে। মুখের উপর কথা বলা বােধহয় একেই বলে। নীচে দেশলাই ছাপ। দেশলাই আর সিগারেট মিলে | চমৎকার কম্বিনেশন। দেড় হাত তফাতে ঘুটের ভাস্কর্য। ঐতিহ্যবাহী ফিঙ্গার প্রিন্ট। খুঁটে পেরােলেই চেনা লিপি | পার্বতী আই লাভ ইউ। দেয়ালজুড়ে দেয়ালি। ইউনিভার্সিটি শিরীষ গাছের নীচেই। আবার হুড়মুড়িয়ে বৃষ্টি এল। যেন দোতলার ব্যালকনি থেকে কেউ আধ বালতি | জল ঢেলে দিল। যাচ্ছেতাই ভিজে গেলাম। দৌড়ে ঢুকে পড়লাম ইউনিভার্সিটির বারান্দায়। সেখানে জোর বাতাসে
লাট খাচ্ছে রজনীকান্তের কাট আউট। ভিতরে উকি মারলাম। একটা লােককে দেখতে পেলাম। পঞ্চান্ন-ষাটের মরিয়া যুবক বাড়মুডা। ক্যাটকেটে লাল গেঞ্জি। বাঁ-কানের লতিতে রিং কবজিতে বাউল ব্রেসলেট। সব খুলে ধুতি-পাঞ্জাবি চড়িয়ে দিলে শেষ বয়সের বিকাশ রায়।
একটা লাল ফাইবারের টেবিল। টেবিলের পায়ে লেখা মদন ডেকরেটর্স। টেবিলের উপর ছড়ানাে দেব-কোয়েল
* সােহম-শুভশ্রীদের ফোটোগ্রাফ। একটা হ্যান্ডিকমও দেখতে পেলাম। লােকটা ফোটোগুলাে নাড়ছে চাড়ছে দেখছে ছাড়ছে। কিছু একটা বােঝার চেষ্টা করছে। ঠোট কামড়াচ্ছে।
- এতদূর অব্দি ঠিকই ছিল, কিন্তু এদিক-ওদিক তাকিয়ে শুভশ্রীর ফোটোগ্রাফে যেই পিচিক করে একটা চুমু খেল, আমার কাশি পেয়ে গেল। অবাক হলে, অভিমান হলে, ভয় পেলে, দুঃখ পেলে আমার কাশি পায়। আজব বিমারি লােকটা আমার দিকে তাকিয়ে মার্কামারা ক্যাবলার হাসি হাসল। মিলিয়ে যেতে যতক্ষণ, তারপর চোখ দুটো মালপাের মতাে গােল্লা গােল্লা আর ফুলাে ফুলাে হয়ে গেল। এরপর চুলােয় যাক চুমুর লজ্জা করে বেরিয়ে এল লােকটাএয়ারে পকাইদা, কী ফরচুন আমার!
পকাই আমার নাম নয়। আমার চরিত্রের নাম। এই নামেই টিভিগিরি করেছি। টিভির দর্শকরা এই নামেই আমাকে চেনে। লােকটা বলল, হ্যা হ্যা হ্যা, পুরাে ভিজে গেছেন বস। প্লিজ কাম ইন। ভিতরে গােটাকতক ফাইবারের চেয়ার। পিছন দিকে মদন ডেকরেটরের লােগাে। একটা বাড়িয়ে দিল।মাটির দেয়াল সারা দেয়ালে রােমান্টিক জুটিদের ফোটো পিস। বেশিরভাগ ক্যালেন্ডার মার্কা। রাজকাপুর-নার্গিস, অমিতাভ-রেখা, উত্তম-সুচিত্রা, দেব-কোয়েল। উপরে কামিং সুন লিখে দিলেই মনে হবে ভিডিয়াে হলের বারান্দায় বসে আছি। একটা পুরাে দেয়াল রজনীকান্তের জন্য ছাড়া। রজনীকান্ত সেই দেয়ালে সিগারেট লােফালুফি করছেন। আঙুলের ডগায় কালা চশমা ঘোরাচ্ছেন। যেন সার্কাস। দরজার পাল্লায় প্রসেনজিৎ। সঙ্গে তিন প্রজন্মের ড্রিমগার্লস। দুটি পাতার সেই নায়িকাও দু-চোখে রােমান্স ঢেলে দাঁড়িয়ে আছেন। পেপারে পড়েছি তিনি তারাপীঠে না কোথায় ভিক্ষে করেন। নায়িকারা ভালােবেসে ভিখিরি হয়ে গেল। প্রসেনজিৎ মনের মানুষ।
লােকটা বলল, আমার লাইনের নাম ব্ল। সবাই এখানে বুলুদা বলে। প্রনাউন্সেশনে প্রবলেম, বুঝলেন না? আপনাদের আশীবাদে এই ইউনিভার্সিটি গড়েছি। কেমন বুঝছেন স্যার?

এখনও বুঝিনি। পড়ছি। হ্যা হ্যা হ্যা, এসে না এসেই লে ছক্কা। আপনিই পারেন স্যার। ওয়েট এ বিট। ব্ল আয়লার মতাে গেল আর হুদহুদের মতাে এল। হাতে একটা গামছা আর পাজামা। নিন স্যার, মুখে চোখে জল দিয়ে পাজামাটা প্রসাদ করে দিন। মুখে চোখে আর নতুন করে জল দেওয়ার সাধ হল না। বললাম, এটা চেখে দেখতে হবে?  হ্যা হ্যা হ্যা, আপনি পরলেই প্রসাদ। একেরে কড়কড়ে। নতুন নােটের মতাে। তারপর চাপা স্বরে বলল, সৌমিত্ৰদা, রজতাভদা, তারপর ইয়ে...নামটা বলুন না? মনোজ মিত্র?
ইয়েস মনােজদা...ওনারা মাঝে মাঝেই পায়ের ধুলাে দেন, তাই এক ডজন পাতলুন কিনে রেখেছি। এলে তাে স্টে করতেই হয়। এতগুলাে ছেলমেয়ের ভবিষ্যৎ, স্বপ্ন। বুঝতেই পারছেন। নিন পরে ফেলুন। নিন পরে ফেলুন। সর্দি লেগে যাবে। অবশ্য সেলেবদের সর্দি হতে কখনও দেখিনি। হ্যা হ্যা হ্যা।।
| আমি উদোম গায়ে পাজামা গলিয়ে বসে রইলাম। টেবিলফ্যান তাক করে ভিজে জামা প্যান্ট ঝুলিয়ে দিলাম চেয়ারের মাচায়। মাথায় উঠল আগাপাছতলা। কাচের গ্লাসে চা এল। শালপাতায় চপ। | নিন খেয়ে নিন। আজই আমাদের ক্লাসটা একবার করে যাবেন প্লিজ। আপনি আসছেন জেনে স্টুডেন্টরা ভীষণ এক্সাইটেড। ক্লাস?
নিউজ রিডিং। আজ থেকেই স্টার্ট করে দিন। অ্যাকচুয়েলি এটা দেবরাজদার ক্লাস। নানাদিকে এনগেজড, বুঝলেন না?
তাই আর সময় বের করতে পারছেন না। | দেবরাজদা মানে দেবরাজ রায়? ইয়েস স্যার। আমাকে দারুণ ইয়ে করেন। কলকাতায় গেলে ওনার ফ্ল্যাটেই উঠি। ওনার ক্লাস আমি নেব? ইয়ার্কি নাকি?
উফ, আপনি কীসে কম স্যার? আপনার প্রােগ্রাম তাে দেখেছি। ব্যাপক ডেলিভারি।। _ বার খেয়ে গেলাম। ক্লাসে ঢুকলাম পাতলুন পতপতিয়ে। সিঁড়ির তলার মতাে আধা অন্ধকার। সাকুল্যে তিনটে মেয়ে। সস্তা সিল্কের সালােয়ার টপ। মহাদেবের সাপের মতাে গলায় ওড়না জড়ানাে। এই প্যাচটা টিভি থেকে রপ্ত করেছে। ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক। চুল উড়ু উড় শিমুল তুলল। দেড় টাকার শ্যাম্পু প্যাক। চোখে টইটম্বুর স্বপ্ন। শীতলপাটিতে থেবড়ে বসেছিল। ট্রানজিস্টারে খবর শুনছিল। মেঘবাদলার দিন। কর্কশ পরিবেশন। তাই-ই শুনছিল। কী অধ্যবসায়! আমাকে দেখেই তিনজন ট্যাঙটেঙিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। গুডমর্নিং স্যার। গায়ে আমার ভেজা গামছা। সেটা এখন বস্তার মতাে ভারী লাগছে। লাগুক। বললাম-ভেরি গুড মর্নিং। অটোগ্রাফ প্লিজ। তিনজনের ত্রিকোণ আক্রমণ। হাতে বারাে পৃষ্ঠার সস্তা খাতা। ওতেই অটোগ্রাফ, ওতেই শিখন পঠন। ক্লাস ফোরে পড়ার সময় এরকম একটা বঙ্গলিপি খাতা আমাকে কিনে দিত। গামছা হড়কে যাচ্ছিল। সামলে নিলাম।–তােমাদের নাম?"
আয়ম সীমারানি মণ্ডল। আমি ননীবালা দলুই। আমার নাম পিঙ্কি কুম্ভকার। আমি শেকড় থেকে গাছ বাওয়া শুরু করলাম—তােমরা | নিউজ রিডার হওয়ার কথা ভাবলে কেন? তিনজন মুখ চাওয়াচাওয়ি করল। এ ওর মুখে উত্তর খুঁজল। আমি যেন | কুইজ মাস্টার। ননীবালা বলল—খবর পড়ব বলে। সীমা বলল-নাচ গান অ্যাক্টিং সবাই শেখে। খুব কম্পিটিশন। এ লাইনে কম্পিটিশন নেই। পিঙ্কি বলল, এই লাইনে ইস্কোপ বেশি। কে বলেছে স্কোপ বেশি?
বুলুদা। তাছাড়া তাে নিজের চোখেই দেখেছি রাতদিন সাতদিন খবর পড়ছে তাে পড়ছেই।। এটা দেবরাজ রায়ের ক্লাস। আমার জ্ঞানগম্যি তার তুলনায় খুব সামান্য। কিছু পরামর্শ দিচ্ছি। হয়তাে তােমাদের কাজে লাগবে।
ননীগোপাল বলল, ঠিক আছে স্যার, আপনি বলেন, আমরা টুকে নিচ্ছি। আবার তাে পরের হপ্তা। ততদিনে মুখস্থ করে নিব। সস্তার ডটপেন। সস্তার খাতা। পাতাগুলাে ভিজে বাতাসে উড়ছে। অলীক স্বপ্নরা ডানা ভাঙছে। কোথাও যাওয়া সম্ভব হবে না জেনেও।
আমি বললাম, থাক। তােমরা বরং একটা করে কবিতা
শােনাও। আবার মুখ চাওয়াচাওয়ি। কবিতা না জানার দৈন্যতা প্রতিটি মুখে। সীমা বলল, বুলুদা বলছিল কোনাে এক্সপেরিয়েন্স লাগবে। । ভরতি হলে সব শিখিয়ে পড়িয়ে নেওয়া হবে। তােমার কোনাে কবিতা জানা নেই? আমার দাদা ডায়রিতে চুপিচুপি চার লাইন লিখে রেখেছিল। তারপর ঘর ছাড়ল জন্মের মতাে। সেই চার লাইন আমি মুখস্থ রেখেছি। বলব? জন্মের মতাে ঘর ছাড়া কত সহজ এদের কাছে। সীমার চোখের কোণ একটুও চিক চিক করল না। বললাম, তাই শােনাও।
না হয় আমি ফুরিয়ে যাব। না হয় হব ঋণী। ভুল হবে কি, মনের মতাে। স্বপ্ন যদি কিনি? আমার পােশাক তখনও শুকোয়নি। বাইরে তখনও বৃষ্টি। পড়ুক। আমার ভেজা পােশাক আর নতুন করে বৃষ্টি নেবে না। তিনটি মেয়ে। গাঢ় লিপস্টিকে স্বপ্নের রং। বৃষ্টি, ওদের রং ধুয়ে দাও। ও কৃষ্ণমেঘ, ইথার তরঙ্গের রাস্তা থেকে সরে দাঁড়াও। ওদের ট্রানজিস্টারে বেজে উঠুক একটু সত্যি সংবাদ।

___________________






Previous Post Next Post