ভুতের গল্প
ভুতের গল্প:- যেখানে ভূতের ভয়
দ্বি -তীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার বেশ বকয়েকদিন পরের ঘটনা রাজনৈতিক
দৌত্যের কাজে আমেরিকার হােয়াইট হাউসে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন
চার্চিল | সারাদিনের কাজের ক্লান্তি কাটাতে সেখানে স্নানঘরের বাথটবে
নিজের মতাে করে একটু সময় কাটাচ্ছেন চার্চিল সঙ্গী শুধু। স্কচ আর ঠোঁটের
কোণে সিগার পানীয় আর কড়া তামাকের গন্ধে স্নানঘরের বাতাস হয়ে উঠেছে
ভারী ঘরের মৃদু আলােরও বােধকরি কষ্ট হচ্ছিল ধূম্রজাল ভেদ করে ভিজে মেঝে
স্পর্শ করতে! ট্যাপ কল থেকে জল পড়ার অবরাম টুপটাপ আওয়াজ যেন প্রাসাদের
নৈঃশব্দ্য বাড়িয়ে তুলেছিল আরও ঠিক সেই সময়, সামান্য শব্দ কি পাওয়া গেল
পাশের স্নানঘরের সঙ্গে সংযুক্ত বেডরুম থেকে?
চার্চিল সতর্ক হলেন চার্চিলের হঠাৎ করে একটা অনুভূতি হল, চেনা কেউ বেডরুমে ঢুকেছেন তবু সন্দেহের মার নেই, বিবস্ত্র অবস্থাতেই তাড়াহুড়াে করে স্নানঘর থেকে বেরিয়ে বেডরুমে ঢুকলেন চার্চিল ঢুকেই স্থাণবৎ দাঁড়িয়ে রইলেন ‘আপনি!
চার্চিলের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন কিংবদন্তি আব্রাহাম লিঙ্কন!
বিড়বিড় করলেন চার্চিল, এ কী করে সম্ভব! তবে কি, তবে কি লিঙ্কনের আত্মা দাঁড়িয়ে আছেন!
চলবে না পরিস্থিতিটা স্বাভাবিক করা দরকার কিন্তু কী বলে সম্বােধন করবেন আব্রাহাম লিঙ্কনকে? মিঃ লিঙ্কন বলা উচিত হবে কি! বােধহয় না, ‘মিঃ প্রেসিডেন্ট ভয় পেলে চলবে না, ঘাবড়ে গেলেও বলাই সমীচীন হবে চার্চিল ওই লজ্জাজনক পরিস্থিতিতেই, সামান্য খুক খুক করে কাশলেন তারপর মৃদুস্বরে বললেন,
‘শুভ সন্ধ্যা মিঃ প্রেসিডেন্ট। বড় অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে আপনাকে পেলাম | চার্চিল কথা বলা শেষ করা মাত্র, লিঙ্কনের সেই ছায়ামূর্তি মৃদু হেসে উধাও হয়ে গেলেন!
ব্যাখ্যাতীত এই ঘটনা লিপিবন্ধ করে গিয়েছেন চার্চিল নিজে শুধু চার্চিল নয়, স্যার আর্থার কোনান ডয়েল সম্পর্কে খোঁজখবর করলেও জানা যায়, তিনিও অশরীরী নানা বিষয়ের সাক্ষী হয়েছিলেন মাঝেমধ্যেই প্ল্যানচেট-এ মিডিয়ামের মাধ্যমে কথা বলতেন বিভিন্ন মৃত ব্যক্তিত্বের সঙ্গে তাহলে কি আমরা ধরে নেব, ভূত আছে?
প্রশ্ন যখন উঠছেই তখন উত্তর দিতেই হবে তবে মূল উত্তরে আসার আগে আমরা বরং দেখে নিই, ভুতের ভয়ের উদ্রেক হয় কীভাবে?
সাধারণভাবে আমাদের ধারণা, যাঁরা খুব দুর্বলচিত্ত, ভীরু প্রকৃতির মানুষ, একটা কাজও অন্যের সাহায্য ছাড়া করতে পারেন , তাঁরাই ভূতের ভয় পান যদি তাই হবে, তবে আর্থার কোনান ডয়েল, উইলস্টন চার্চিলকে কী বলবেন? জগৎপ্রসিদ্ধ লেখক এবং ক্ষুরধার রাজনীতিক—দুজনেই পরিচিত ছিলেন তাঁদের তীব্র যুক্তিবােধের জন্য। মনে রাখতে হবে, কোনও অলৌকিক, অযৌক্তিক বিশ্লেষণের ওপর ভর করে ডয়েলের সৃষ্টি গােয়েন্দা শার্লক হােমস কাজ করতেন না বরং সমস্ত রহস্যময় ঘটনার পিছনে থাকত হােমসের লৌকিক ব্যাখ্যা অন্যদিকে চার্চিলের তুখােড় রাজনৈতিক বােধবুদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করাটাই বােধহয় নির্বুদ্ধিতার পরিচয় হবে অর্থাৎ অপারসাহসী, যুক্তিবােধে ভরপুর মানুষেরও ‘উপযুক্ত পরিবেশে গা ছমছম করে উঠতে পারে। পরাবাস্তব ঘটনার সাক্ষী হয়ে উঠতে পারেন তিনিও!(ভুতের গল্প) সাক্ষাৎ প্রতিমূর্তি আমেরিকার চার ভাগের তিন ভাগ লােকই অপ্রাকৃত ঘটনায় বিশ্বাসী এমনকী এই বিশ্বাসী মানুষের প্রতি ৫. জান অবাক হবেন, আধুনিক সমাজের
জনের মধ্যে ১ জন দাবি করেছেন যে, তাঁরা নাকি স্বচক্ষে ভুত দেখেন অর্থাৎ অত্যাধুনিকতাও ভূতের ভয় তাড়াতে পারে না আমাদের দেশের মানুষের সম্পর্কে এখনও কিছু জানা সম্ভব হচ্ছে না, কারণ এই ধরনের কোনও সমীক্ষা হয়নি তাহলে এবার দেখা। যাক, কেন মানুষের
এমন অপার্থিব অনুভূতি হয়? এখানে অনুভূতি শব্দটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ, অনুভূতি আমরা পাই স্নায়ুর মাধ্যমে ভূত দেখার পিছনে স্নায়ুগত ব্যাখ্যা কি তবে কিছু আছে? দেখা যাক টেম্পােরাল লােব সিজার; এটি একধরনের মৃগী রোগের বর্তমান নাম কমপ্লেক্স পার্শিয়াল সিজার বা সিপিএস এই সমস্যায় মানুষ সম্পূর্ণভাবে জ্ঞান হারায় না এই সমস্যা রোগীর মধ্যে কয়েক মিনিটের জন্য স্থায়ী হয়, ওই অবস্থাতেই রােগী অপ্রাকৃত অনুভূতির সাক্ষী হন তার মনে হয়, পিছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে বা তাঁর শরীরটা আসলে অন্য কারও নিয়ন্ত্রণাধীন!(ভুতের গল্প) রাইট ব্রেন হেমারেজঃ ব্রেনের ডানদিকে হেমারেজ বা রক্তপাত হলেও বিভিন্ন ধরনের অপার্থিব ঘটনার অনুভূতি ঘটতে পারে। আমরা যা চোখে দেখি তার বিশ্লেষণ হয় মস্তিষ্কের ডান অংশে বা ব্রেনের রাইট হেমিস্ফিয়ারে ওই অংশে কোনও সমস্যা হলে রােগী বিভিন্ন ধরনের অপার্থিব দৃশ্য দেখতে পারেন!
অন্যদিকে মনােবিজ্ঞানীরাও জানাচ্ছেন, কেউ পরাবাস্তব অভিজ্ঞতার সাক্ষী হবেন কি না তা কতগুলাে শর্তের ওপরেও নির্ভর করে
পরামর্শ: কোনও জায়গা সম্পর্কে আগে থেকে কারও কাছে, ‘অন্ধকারাচ্ছন্ন, অপার্থিব, ভূতুড়ে, গা ছমছমে’-এর মতাে বিশেষণ শুনে নিলে মন সেভাবেই তৈরি হয়ে যায় ফলে বাস্তবে ওই জায়গায় পা দেওয়ার পরেই আমাদেরও ওই পরামর্শদাতার মতাে অপার্থিব অনুভূতি হওয়া আশ্চর্য নয় তড়িৎ চুম্বকীয় ক্ষেত্র: অস্ট্রেলিয়া স্নায়ুরােগ বিশেষজ্ঞ মাইকেল পারসিঙ্গার জানাচ্ছেন, কারও ব্রেনের টেম্পােরাল ললাবে তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ চালনা করলেও অপার্থিব অনুভূতি হতে পারে মনে হতে পারে পাশে কেউ দাঁড়িয়ে রয়েছে বা গায়ে কেউ স্পর্শ করে গেল ডাঃ পারসিঙ্গার জানাচ্ছেন, পৃথিবীর অনেক জায়গাতে জিওম্যাগনেটিক অ্যাক্টিভিটি হচ্ছে এবং সেখান থেকে তড়িৎচুম্বকীয় বিচ্ছুরণ হচ্ছে তা নিয়ে গবেষণার প্রয়ােজন আছে একইভাবে কোনও ব্যক্তির ওপর ক্রমাগত ‘ইনফ্রা সাউন্ড’ (যে কম্পাঙ্কের শব্দ আমাদের কানে ঢােকে, তার চাইতেও কম কম্পাঙ্কের শব্দ) প্রয়ােগ করলেও একইরকম ঘটনা ঘটতে পারেটক্সিক হ্যালুসিনেশন: দীর্ঘক্ষণ কার্বনমনােক্সাইড, ফর্মালডিহাইড এবং(ভুতের গল্প) কীটনাশকের মতাে বিষাক্ত পদার্থের সানি, থাকলে, অতিপ্রাকৃত অভিজ্ঞতা হতে পা ব্রেনের যে অংশটি কোনও দৃশ্য দেখার পর বিশ্লেষণ করে, সেখানে গণ্ডগােল বাঁধিয়ে দেয় এগুলি ফলে কিছু দেখার পর তার অন্যরকম ব্যাখ্যা করে মস্তিষ্ক ফাঙ্গাল হ্যালুসিনেশন: দীর্ঘদিনের পরনে বাড়ি, জীর্ণ ঘরে ঢোকার পর অনেকেরই অস্বস্তি হয়, ভয় লাগে। বিজ্ঞানীরা। জানাচ্ছেন, ফাঙ্গাসের কণা থেকেও মস্তিষ্কে একধরনের পরাবাস্তব অনুভূতি তৈরি হয়। অন্যান্য কারণ—
অসুখবিসুখ: অনেকে বলেন, পার্কিনসন রােগীদের এমন ওষুধ দেওয়া হয় যা ডােপামিন নামে নিউরাে কেমিক্যাল-এর ক্ষরণ বাড়ায় এর প্রভাবে রােগীর মনে হয়, কেউ বােধহয় কানের কাছে কিছু বলল কেউ যেন সামনে দাঁড়িয়ে ডিমেনশিয়া(ভুতের গল্প) রােগীদেরও এমন হয় সিজোফ্রেনিয়া; এই অসুখেও রােগীর মনে হয়, কানের কাছে কে যেন কথা বলছে অলীক দর্শনও করেন অনেক রােগী তবে কেন এই রােগ হয় তা নিয়ে এখনও অনেকরকম ব্যাখ্যা আছে
ড্রাগ: নেশার দ্রব্য সেবন করার পরে বাস্তব সম্পর্কে ধারণা পাল্টে যায় অনেকের সেক্ষেত্রে রজ্জুতে সর্পভ্রম হতেই পারে নিকটজনের মৃত্যু: অনেকসময় কেউ মারা যাওয়ার পর তার সবচাইতে নিকটাত্মীয় যেমন সন্তান, স্ত্রী মৃত ব্যক্তির কথা শুনতে পান, এমনকী তাঁকে দেখতেও পান বলে দাবি করেন খেয়াল করলে দেখবেন, যিনি এমন দাবি করছেন, তিনি নিশ্চিতভাবে নিজেকে বাকি সবার থেকে আলাদা করে নিয়েছেন বদ্ধ ঘরে একা বসে আছেন কারও সঙ্গে কথা বলছেন না মূলত এঁদের ক্ষেত্রেই এমনটা ঘটে কারণ তাঁদের মস্তিষ্কের হিপ্পোক্যাম্পাস অংশে ওই মৃত ব্যক্তির চেহারা, কথা সমস্ত কিছু জমা হয়ে রয়ে গিয়েছে এদিকে তিনি নিজেকে বাইরের জগৎ থেকে আলাদা করে রাখায় মস্তিষ্কে নতুন কোনও তথ্য ঢুকছে না ওদিকে হিপ্পোক্যাম্পাস বার বার ওই ব্যক্তির গলার স্বর, অবয়ব স্মরণ করাচ্ছে তাই ওই আত্মীয়ের মনে হয়, উনি মারা যাননি কাছেই আছেন তাই কোনও ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তাঁর নিকটাত্মীয়কে সঙ্গ দিতে হয় মৃত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলছেন বলে দাবি করলে, তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়ে কাউন্সেলিং করাতে হবে
লিখেছেন: সুপ্রিয় নায়েক
চার্চিল সতর্ক হলেন চার্চিলের হঠাৎ করে একটা অনুভূতি হল, চেনা কেউ বেডরুমে ঢুকেছেন তবু সন্দেহের মার নেই, বিবস্ত্র অবস্থাতেই তাড়াহুড়াে করে স্নানঘর থেকে বেরিয়ে বেডরুমে ঢুকলেন চার্চিল ঢুকেই স্থাণবৎ দাঁড়িয়ে রইলেন ‘আপনি!
চার্চিলের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন কিংবদন্তি আব্রাহাম লিঙ্কন!
বিড়বিড় করলেন চার্চিল, এ কী করে সম্ভব! তবে কি, তবে কি লিঙ্কনের আত্মা দাঁড়িয়ে আছেন!
চলবে না পরিস্থিতিটা স্বাভাবিক করা দরকার কিন্তু কী বলে সম্বােধন করবেন আব্রাহাম লিঙ্কনকে? মিঃ লিঙ্কন বলা উচিত হবে কি! বােধহয় না, ‘মিঃ প্রেসিডেন্ট ভয় পেলে চলবে না, ঘাবড়ে গেলেও বলাই সমীচীন হবে চার্চিল ওই লজ্জাজনক পরিস্থিতিতেই, সামান্য খুক খুক করে কাশলেন তারপর মৃদুস্বরে বললেন,
‘শুভ সন্ধ্যা মিঃ প্রেসিডেন্ট। বড় অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে আপনাকে পেলাম | চার্চিল কথা বলা শেষ করা মাত্র, লিঙ্কনের সেই ছায়ামূর্তি মৃদু হেসে উধাও হয়ে গেলেন!
ব্যাখ্যাতীত এই ঘটনা লিপিবন্ধ করে গিয়েছেন চার্চিল নিজে শুধু চার্চিল নয়, স্যার আর্থার কোনান ডয়েল সম্পর্কে খোঁজখবর করলেও জানা যায়, তিনিও অশরীরী নানা বিষয়ের সাক্ষী হয়েছিলেন মাঝেমধ্যেই প্ল্যানচেট-এ মিডিয়ামের মাধ্যমে কথা বলতেন বিভিন্ন মৃত ব্যক্তিত্বের সঙ্গে তাহলে কি আমরা ধরে নেব, ভূত আছে?
প্রশ্ন যখন উঠছেই তখন উত্তর দিতেই হবে তবে মূল উত্তরে আসার আগে আমরা বরং দেখে নিই, ভুতের ভয়ের উদ্রেক হয় কীভাবে?
সাধারণভাবে আমাদের ধারণা, যাঁরা খুব দুর্বলচিত্ত, ভীরু প্রকৃতির মানুষ, একটা কাজও অন্যের সাহায্য ছাড়া করতে পারেন , তাঁরাই ভূতের ভয় পান যদি তাই হবে, তবে আর্থার কোনান ডয়েল, উইলস্টন চার্চিলকে কী বলবেন? জগৎপ্রসিদ্ধ লেখক এবং ক্ষুরধার রাজনীতিক—দুজনেই পরিচিত ছিলেন তাঁদের তীব্র যুক্তিবােধের জন্য। মনে রাখতে হবে, কোনও অলৌকিক, অযৌক্তিক বিশ্লেষণের ওপর ভর করে ডয়েলের সৃষ্টি গােয়েন্দা শার্লক হােমস কাজ করতেন না বরং সমস্ত রহস্যময় ঘটনার পিছনে থাকত হােমসের লৌকিক ব্যাখ্যা অন্যদিকে চার্চিলের তুখােড় রাজনৈতিক বােধবুদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করাটাই বােধহয় নির্বুদ্ধিতার পরিচয় হবে অর্থাৎ অপারসাহসী, যুক্তিবােধে ভরপুর মানুষেরও ‘উপযুক্ত পরিবেশে গা ছমছম করে উঠতে পারে। পরাবাস্তব ঘটনার সাক্ষী হয়ে উঠতে পারেন তিনিও!(ভুতের গল্প) সাক্ষাৎ প্রতিমূর্তি আমেরিকার চার ভাগের তিন ভাগ লােকই অপ্রাকৃত ঘটনায় বিশ্বাসী এমনকী এই বিশ্বাসী মানুষের প্রতি ৫. জান অবাক হবেন, আধুনিক সমাজের
জনের মধ্যে ১ জন দাবি করেছেন যে, তাঁরা নাকি স্বচক্ষে ভুত দেখেন অর্থাৎ অত্যাধুনিকতাও ভূতের ভয় তাড়াতে পারে না আমাদের দেশের মানুষের সম্পর্কে এখনও কিছু জানা সম্ভব হচ্ছে না, কারণ এই ধরনের কোনও সমীক্ষা হয়নি তাহলে এবার দেখা। যাক, কেন মানুষের
এমন অপার্থিব অনুভূতি হয়? এখানে অনুভূতি শব্দটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ, অনুভূতি আমরা পাই স্নায়ুর মাধ্যমে ভূত দেখার পিছনে স্নায়ুগত ব্যাখ্যা কি তবে কিছু আছে? দেখা যাক টেম্পােরাল লােব সিজার; এটি একধরনের মৃগী রোগের বর্তমান নাম কমপ্লেক্স পার্শিয়াল সিজার বা সিপিএস এই সমস্যায় মানুষ সম্পূর্ণভাবে জ্ঞান হারায় না এই সমস্যা রোগীর মধ্যে কয়েক মিনিটের জন্য স্থায়ী হয়, ওই অবস্থাতেই রােগী অপ্রাকৃত অনুভূতির সাক্ষী হন তার মনে হয়, পিছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে বা তাঁর শরীরটা আসলে অন্য কারও নিয়ন্ত্রণাধীন!(ভুতের গল্প) রাইট ব্রেন হেমারেজঃ ব্রেনের ডানদিকে হেমারেজ বা রক্তপাত হলেও বিভিন্ন ধরনের অপার্থিব ঘটনার অনুভূতি ঘটতে পারে। আমরা যা চোখে দেখি তার বিশ্লেষণ হয় মস্তিষ্কের ডান অংশে বা ব্রেনের রাইট হেমিস্ফিয়ারে ওই অংশে কোনও সমস্যা হলে রােগী বিভিন্ন ধরনের অপার্থিব দৃশ্য দেখতে পারেন!
অন্যদিকে মনােবিজ্ঞানীরাও জানাচ্ছেন, কেউ পরাবাস্তব অভিজ্ঞতার সাক্ষী হবেন কি না তা কতগুলাে শর্তের ওপরেও নির্ভর করে
পরামর্শ: কোনও জায়গা সম্পর্কে আগে থেকে কারও কাছে, ‘অন্ধকারাচ্ছন্ন, অপার্থিব, ভূতুড়ে, গা ছমছমে’-এর মতাে বিশেষণ শুনে নিলে মন সেভাবেই তৈরি হয়ে যায় ফলে বাস্তবে ওই জায়গায় পা দেওয়ার পরেই আমাদেরও ওই পরামর্শদাতার মতাে অপার্থিব অনুভূতি হওয়া আশ্চর্য নয় তড়িৎ চুম্বকীয় ক্ষেত্র: অস্ট্রেলিয়া স্নায়ুরােগ বিশেষজ্ঞ মাইকেল পারসিঙ্গার জানাচ্ছেন, কারও ব্রেনের টেম্পােরাল ললাবে তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ চালনা করলেও অপার্থিব অনুভূতি হতে পারে মনে হতে পারে পাশে কেউ দাঁড়িয়ে রয়েছে বা গায়ে কেউ স্পর্শ করে গেল ডাঃ পারসিঙ্গার জানাচ্ছেন, পৃথিবীর অনেক জায়গাতে জিওম্যাগনেটিক অ্যাক্টিভিটি হচ্ছে এবং সেখান থেকে তড়িৎচুম্বকীয় বিচ্ছুরণ হচ্ছে তা নিয়ে গবেষণার প্রয়ােজন আছে একইভাবে কোনও ব্যক্তির ওপর ক্রমাগত ‘ইনফ্রা সাউন্ড’ (যে কম্পাঙ্কের শব্দ আমাদের কানে ঢােকে, তার চাইতেও কম কম্পাঙ্কের শব্দ) প্রয়ােগ করলেও একইরকম ঘটনা ঘটতে পারেটক্সিক হ্যালুসিনেশন: দীর্ঘক্ষণ কার্বনমনােক্সাইড, ফর্মালডিহাইড এবং(ভুতের গল্প) কীটনাশকের মতাে বিষাক্ত পদার্থের সানি, থাকলে, অতিপ্রাকৃত অভিজ্ঞতা হতে পা ব্রেনের যে অংশটি কোনও দৃশ্য দেখার পর বিশ্লেষণ করে, সেখানে গণ্ডগােল বাঁধিয়ে দেয় এগুলি ফলে কিছু দেখার পর তার অন্যরকম ব্যাখ্যা করে মস্তিষ্ক ফাঙ্গাল হ্যালুসিনেশন: দীর্ঘদিনের পরনে বাড়ি, জীর্ণ ঘরে ঢোকার পর অনেকেরই অস্বস্তি হয়, ভয় লাগে। বিজ্ঞানীরা। জানাচ্ছেন, ফাঙ্গাসের কণা থেকেও মস্তিষ্কে একধরনের পরাবাস্তব অনুভূতি তৈরি হয়। অন্যান্য কারণ—
অসুখবিসুখ: অনেকে বলেন, পার্কিনসন রােগীদের এমন ওষুধ দেওয়া হয় যা ডােপামিন নামে নিউরাে কেমিক্যাল-এর ক্ষরণ বাড়ায় এর প্রভাবে রােগীর মনে হয়, কেউ বােধহয় কানের কাছে কিছু বলল কেউ যেন সামনে দাঁড়িয়ে ডিমেনশিয়া(ভুতের গল্প) রােগীদেরও এমন হয় সিজোফ্রেনিয়া; এই অসুখেও রােগীর মনে হয়, কানের কাছে কে যেন কথা বলছে অলীক দর্শনও করেন অনেক রােগী তবে কেন এই রােগ হয় তা নিয়ে এখনও অনেকরকম ব্যাখ্যা আছে
ড্রাগ: নেশার দ্রব্য সেবন করার পরে বাস্তব সম্পর্কে ধারণা পাল্টে যায় অনেকের সেক্ষেত্রে রজ্জুতে সর্পভ্রম হতেই পারে নিকটজনের মৃত্যু: অনেকসময় কেউ মারা যাওয়ার পর তার সবচাইতে নিকটাত্মীয় যেমন সন্তান, স্ত্রী মৃত ব্যক্তির কথা শুনতে পান, এমনকী তাঁকে দেখতেও পান বলে দাবি করেন খেয়াল করলে দেখবেন, যিনি এমন দাবি করছেন, তিনি নিশ্চিতভাবে নিজেকে বাকি সবার থেকে আলাদা করে নিয়েছেন বদ্ধ ঘরে একা বসে আছেন কারও সঙ্গে কথা বলছেন না মূলত এঁদের ক্ষেত্রেই এমনটা ঘটে কারণ তাঁদের মস্তিষ্কের হিপ্পোক্যাম্পাস অংশে ওই মৃত ব্যক্তির চেহারা, কথা সমস্ত কিছু জমা হয়ে রয়ে গিয়েছে এদিকে তিনি নিজেকে বাইরের জগৎ থেকে আলাদা করে রাখায় মস্তিষ্কে নতুন কোনও তথ্য ঢুকছে না ওদিকে হিপ্পোক্যাম্পাস বার বার ওই ব্যক্তির গলার স্বর, অবয়ব স্মরণ করাচ্ছে তাই ওই আত্মীয়ের মনে হয়, উনি মারা যাননি কাছেই আছেন তাই কোনও ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তাঁর নিকটাত্মীয়কে সঙ্গ দিতে হয় মৃত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলছেন বলে দাবি করলে, তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়ে কাউন্সেলিং করাতে হবে
লিখেছেন: সুপ্রিয় নায়েক