[কাঁচা হলুদ] বহু রোগের হলুদ অব্যর্থ ঔষধ 

[কাঁচা হলুদ] বহু রোগের হলুদ অব্যর্থ ঔষধ

হলুদ অব্যর্থ ঔষধ 

দিন যত এগােচ্ছেতইযেন নিত্যনতুন রােগের দেখা মিলছে। এসব নতুন ধরনের রােগবালাই মােকাবিলায় বাজারেও এসেছেনানা ধরনের ওষুধ বা দাওয়াই। না, তাতেও যেন শান্তি নেই কারও। জোরালাে ওষুধপত্র ব্যবহারে রােগবালাইকে কিছুটা হয়তাে জব্দ করা যাচ্ছে ঠিকই কিন্তু তবুও যেন মানুষ খুশি নয়। চাইছে আরও জোরালাে। ও আরও ফলপ্রদ দাওয়াই। এই অতৃপ্তিই আবার মানুষকে ঠেলে দিচ্ছে গবেষণার দিকে। গবেষণাও চলছে জোরকদমে। উদ্দেশ্য সঠিক ভেষজ আবিষ্কার করে রােগবালাইকে ভালােরকম জব্দ থুড়ি কজা করা। সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের দৃষ্টি পড়েছে আমার আপনার অতি পরিচিত হলুদের ওপরে। বিজ্ঞানীরা বিস্তর গবেষণায় দেখেছেন যে নানা রােগ সারাতে ও প্রতিরােধে হলুদ এক অব্যর্থ দাওয়াই।  আতীতের দিনে  আর্য়ুবেদ বিশেষজ্ঞ্রা হ্লুদের নানা অংশ বিশেষ করে পাতা, ফুল বা বাকল (ছাল)-এর নির্যাস ব্যবহার করে রােগবালাই নির্মুল করতেন। তবে হালআমলের বিজ্ঞানীরা আধুনিক গবেষণার মাধ্যমে লক্ষ করেছেন যে এসব নির্যাসে উপকারী ও অপকারীদু'ধরনের উপাদানই থাকে। তাই আধুনিক বিজ্ঞানীদের মুখ্য উদ্দেশ্য হল উপকারী বা সক্রিয় উপাদানকে আলাদা করে সেই উপাদানগুলাের সঠিক পরিমাণ বা মাত্রা নির্ধারণ করা, যাতে করে অত্যন্ত কম পরিমাণে প্রয়ােগ করেও সহজে রােগবালাই সারানাে যায় | হলুদের ওপর জোরকদমে গবেষণা চালাতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা লক্ষ করেছেন যে হলুদের নির্যাসের বেশিরভাগ অংশটাইসক্রিয় বা উপকারী অর্থাৎ এদের ভেষজগুণ নিঃসন্দেহে অকল্পনীয় আর বাকি অংশের মধ্যে অপকারী উপাদান একেবারেই নগণ্য। মূলত সেই অংশের মধ্যে খুব বেশি পরিমাণে রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা না অতীত্রে  দিনে আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা হলুদের থাকলেও বিষক্রিয়া বা টক্সিক এফেক্ট প্রায় নেই বললেই চলে।

হ্লুদের  মধ্যে থাকা কারকিউমিন একাধারে সিন্থেসিস কমিয়ে দেয় এবং এল ডি এল এর জারণক্ষমতাকে বন্ধ করে। আন্য দিকে অনুচক্রিকা বা প্লেটলেটের তঞ্চন ক্ষ্মতাকে প্রতিহত কের রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না।

হলুদ নিয়ে গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা লক্ষ করেছেন যে হলুদের মূলের নির্যাসের অধিকাংশ অংশটাই একরকম ফেনল জাতীয় যৌগ  (পলিফেনলস)। আর এজন্যইহলুদের এই হলুদ রঙ।এইসক্রিয় যৌগটিকেবলাহয়কারকিউমিন। এটি আবার তিন ধরনের যেমন কারকিউমিন
ওয়ান,টুএবং থ্রি। এর মধ্যেকারকিউমিন-ওয়ান ই থাকে সবথেকে বেশি পরিমাণে আর এটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নানা রােগ যেমন ক্যানসার, নিউরােডিজেনারেটিভ ডিসঅর্ডার, যে কোনাে প্রদাহ বা ইনফ্লামেশন ও অন্যান্য রােগবালাই যেমন পাকস্থলি ও অন্ত্রের ঘা (গ্যাস্ট্রোডিয়ােডেনাল আলসার) সারাতে এটি খুব কার্যকরি। তবে কাঁচা হলুদের থেকে বের করা নির্যাস ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা রােগবালাই মােকাবিলায় বেশি ফল পেয়েছেন। এ এছাড়াও হলুদের ভেতর যেসব ফাইটোকেমিক্যাল আছে তার মধ্যে কারকিউমিন যেসব রােগ সারাতে ভালােরকম ভূমিকা নেয়। তা হল অম্বল, গ্যাস এবং পেটের ব্যথা। আর একটু ভিন্ন ধরনের রােগ যেমন অস্টিওআথ্রাইটিস, লিভারের অসুখ (লিভার ডিজিজ), অ্যাথেরােস্কেরােসিস (হদযন্ত্র সম্পর্কিত রােগ) মােকাবিলাতেও হলুদের জুড়ি মেলা ভার। এমনকী অ্যালকোহল ও মানসিক চাপঘটিত পাকস্থলি ও অন্ত্রের আলসারে প্রদাহ বা ইনফ্লামেশন কমিয়ে ক্ষত পুরােপুরিভাবে সারিয়ে দেয়। হলুদের মধ্যে থাকা কারকিউমিন একাধারে কোলেস্টেরলের সিন্থেসিস কমিয়ে দেয় এবং এল.ডি.এল-এর জারণক্ষমতাকে বন্ধ করে। অন্যদিকে অনুচক্রিকা বা প্লেটলেটের তঞ্চন।

ক্ষমতাকে প্রতিহত করে রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় । বিভিন্ন ক্যানসার যেমন প্রস্টেট, ব্রেস্ট, ত্বক। এবং কোলন ক্যানসারে হলুদের কারকিউমিন প্রয়ােগ করে দেখা গেছে যে কারকিউমিনের। ক্যানসার প্রতিরােধ ক্ষমতা তুলনাহীন। তবে। কীভাবে এটি ক্যানসার হবার পথকে আটকায় তা জানার জন্য আরও বিস্তারিত গবেষণার প্রয়ােজন রয়েছে। _ ব্যাক্টেরিয়া বা জীবাণু ধবংসকারী অ্যান্টিবায়ােটিক হিসেবে, ক্ষত নিরাময়ে, মশা। তাড়াবার রাসায়নিকে এবং চোখের প্রদাহ তথা ইনফ্লামেশনেও কারকিউমিন এক ফলপ্রদ। দাওয়াই। হলুদ নিয়ে গবেষণা চলছে সারা বিশ্বজুড়ে। এশিয়ান দেশগুলাের মধ্যে সব থেকে বেশি কাজ হচ্ছে চীন, জাপান, তাইওয়ানের কিছু বিশিষ্ট গবেষণাগারে। পশ্চিমী দুনিয়ায় অর্থাৎ ইউরােপে সামান্য কাজ হলেও আমেরিকায় এগুলাের কার্যকারিতা সম্বন্ধে যথেষ্ট কাজ হচ্ছে এবং জোরকদমে গবেষণা চলছে। এ কলকাতার বিজ্ঞানীরাও গবেষণার ক্ষেত্রে অনেক নতুন পথ দেখাচ্ছেন। বিশ্ববিজ্ঞানীদের পাশাপাশি কলকাতার বিজ্ঞানীরাও হলুদের ভেতরকার কারকিউমিন ঠিক কীভাবে কাজ করে তা অনেকটাই জানতে পেরেছেন। তাই হলুদের সক্রিয় উপাদানগুলাে কী কৌশলে কাজ করে (মেকানিক অ্যাসপেক্ট) তা অদূর ভবিষ্যতেই বলে দেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা। হলুদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে শুকনাে হলুদের থেকে কাঁচা হলুদই বেশি কার্যকরী। বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারের পরীক্ষালব্ধ ফলাফল থেকে এ বিষয়টি লক্ষ করেছেন। বিজ্ঞানীরা কাচা হলুদের নির্যাস প্রয়ােগ করে দেখেছেন যে ইনডিউসড গ্যাসট্রিক আলসার প্রতিরােধে এটি শুকনাে হলুদ থেকে নিষ্কাশিত কারকিউমিনের থেকে প্রায় দশগুণ বেশি কার্যকরী। এর মূল কারণ যেটা তা। হল আলাের সংস্পর্শে এলে কারকিউমিনের সক্রিয়তা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। তাই রােদে শুকনা করা হলুদ থেকে নিষ্কাশিত কারকিউমিনের থেকে কাঁচা হলুদ থেকে পাওয়া কারকিউমিন বেশি কার্যকরী। গ্যাসট্রিক আলসারে যে কোনাে ধরনের এনজাইম একটা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত তৈরি হয়। এরপর আস্তে আস্তে তা কমতে থাকে। কিন্তু সেটা ঘা বা আলসার না হয়ে যদি ক্যানসার হয়। তবে কমা তাে দূরের কথা তা ক্রমশ বাড়তেই থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্যানসারের সময় প্রােএনজাইমগুলাে সক্রিয় তথা অ্যাক্টিভ এনজাইমে অত্যাবশ্যকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়। ফলে কলাস্তরের স্বাভাবিক অবস্থা এলােমেলাে হয়ে যায় (অ্যাবনরমাল)। সিস্টেম তার আগের অবস্থায় আর ফিরে আসতে পারে না। এনজাইমগুলাে যােগকলা ও পর্দায় অনবরত ভাঙাগড়ার কাজ চালাতে থাকে। এলােমেলাে কোষগুলাের বৃদ্ধি ও ছড়িয়ে পড়া ব্যাপারটা বাড়তে থাকে। এ সময় টিউমার ক্যানসারদুষ্ট নয় অর্থাৎ বিনাইন থেকে ক্যানসারদুষ্ট বা ম্যালিগন্যান্ট হয়ে যায়। | হলুদের ভেতরে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট,  অ্যান্টিইনফ্লামেটরি ধর্ম। বেশি মাত্রায় হলুদ ব্যবহারেও যে তেমন ক্ষতির কোনাে সম্ভাবনা নেই সেকথাও চীনা ও আমেরিকান বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণাপত্রের মাধ্যমেজানিয়েছেন। পরিশেষে তাই বলা যায়, হাজারাে অসুখ মােকাবিলায় হলুদ আজ এক আদর্শ ও কার্যকরী দাওয়াই। ক্যানসার, আলসার, আথ্রাইটিস, অ্যালজাইমার রােগকে দূরে সরিয়ে রাখা সম্ভব হলুদের ভেষজগুণে। আর কাচা হলুদ হাতের নাগালের মধ্যে থাকলে বেশি দাম দিয়ে হলুদ থেকে নিষ্কাশিত পেটেন্ট ওষুধ কখনােই কিনবেন । কেননা পেটেন্ট ওষুধগুলাে থেকে দেখা দিলেও দিতে পারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, যা কিনা কাচা হলদ থেকে কখনাে দেখা দেবে না।
────────
أحدث أقدم