Love Stories Bangla (বাংলা ছোট গল্প  প্রথম দেখা)ছোট গল্প

প্রথম দেখা


(১.) "কি হলো ফোন ধরছিলে না কেন?" ফোনের ওপাস থেকে রিতার উত্তর,"আমায় দেখতে এসেছিল" সাথে সাথে মানস এর উত্তর,"তা পছন্দ হলো তোমায়?" মানস দুই বছর হয়েছে কমার্স নিয়ে কলেজ পাস করেছে। এখন বেকার,রিতা হলো ওর ফেসবুক ফ্রেন্ড। না না ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে না। খুব ভালো বন্ধু হলে যে রকম হয়,ওরা সেই রকম। দুজন দুজনের অনেক কথা শেয়ার করে।মাঝে মাঝে কথাও বলে ফোনে। মানসের কথার উত্তরে রিতা বললো," ধুস! সে কি এখন বলবে নাকি? বাড়ি যাক আমার গঠন,পরিবার,পড়াশুনা সব নিয়ে কাটাছেড়া হোক তারপর না হয় ফোন করে বলবে। বাদ দাও ওসব কথা। তা বলো এতো দিন কোথায় ছিলে?" ..."আর বোলোনা এই চাকরির পড়া পড়তে পড়তে হাপিয়ে উঠেছি,কবে যে কিছু একটা চাকরি পাবো?" ..."পাবে পাবে আমার আশীর্বাদ রইল" বলে রিতা মজার ছলে হাসতে লাগলো।

(২..) আজ রিতার ফাইনাল ইয়ারের রেজাল্ট আউট হলো। রেজাল্ট নিয়ে বাড়ি এসে রিতা মাকে বললো,"মা এবারের মতো উতরে গেছি । " মার উত্তর, "খুব ভালো খবর,জানিস! ওই যে সেদিন যারা দেখতে এলো,ওদের মোটামুটি পছন্দ । " এই কথা শুনে কিরকম অপ্রত্যাশিত ভাবে মানসের কথা মনে পড়ে গেল রিতার । তাও মনে পড়া কথাটা চেপে দিয়ে সে নেট টা অন করে একটু ফেসবুক করা শুরু করলো,আর একটা স্টাট্যাস দিলো "ফাইনালি আই এ্যাম গ্রাজুয়েটেড।" কিছুক্ষণের মধ্যেই মানসের প্রথম কমেন্ট টা এল "প্রাউড অফ ইউ মাই বেবি " মাই বেবি!...লেখাটা দেখে রিতার কেমন একটা আনন্দ হতে লাগল। রিতা সাথে সাথে ফোন করে বসলো মানসকে,"এমনিই ফোন করলাম,তোমার সাথে কথা বলবো বলে" -"হ্যাঁ বলো,আমি ফ্রি আছি,তা কখন নিয়ে আসলে রেজাল্ট?" -"এই তো একটু আগেই"........ এই ভাবে ৬/৭ মাস চলতে লাগল।

(৩...) আজ রাতে অফিস থেকে বাড়ি আসার পথে রিতার বিয়ের কার্ড ছাপিয়ে নিয়ে এসেছে বাবা। আগামী ৪ ঠা ফাল্গুন বিয়ে,রোহিতের সাথে,ওই যে রিতাকে দেখতে এসেছিল। আজ ১ সপ্তাহ হয়ে গেল মানসের কোনো এস এম এস বা ফোন আসেনি বা রিতার কোনো এস এম এসের উত্তর ও দেয়নি। খারাপ আশঙ্কা গুলো মাথায় নিয়েই আর ধৈর্য্য ধরতে না পেরে মানস কে ফোন করেই বসলো পর দিন সকালে। কোন রেসপন্স নেই,দুবার...তিন বার... কিছু সময় পর আবার ফোন...এভাবে প্রায় পুরো দিনই চললো,কিন্তু এবার....না এবারেও না। অবশেষে রাতে ফেসবুকে রিতা একটা এস এম এস করলো... "তোমার কি হয়েছে মানস? এত দিন তো আমার সাথে যোগাযোগ না রেখে কোনোদিন থাকোনি তুমি। আমার কিছু বলার ছিল মানস তোমায়। আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই। তুমি ফোন কোরো সময় করে।গুড নাইট। "

(৪....) আর ৯ দিন বাকি রিতা আর রোহিতের বিয়ের। বাড়িতে সবার মনে একটা ব্যস্ততা এবং আনন্দ বিয়ের অনুষ্ঠানকে ঘিরে।কিন্তু রিতা কেমন মন মরা হয়ে শুয়ে আছে খাটে। রাত এখন ৯ টা বাজে।হালকা শীতের মধ্যেও বাইরে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। হঠাৎ পাশে রাখা ফোন টা শব্দ করে আলো জ্বলে উঠলো। মানসের এস এম এস..."কেমন আছো,আমার খুব খারাপ লাগছে প্রায় দেড় মাস পরে তোমায় রিপ্লাই দিচ্ছি। আমার মা মারা গেছিলো তাই এই কদিন কোনো নেট ইউজ বা ফোন ব্যাবহার করার মতো মনের অবস্থা আমার ছিল না,আজ অনেক দিন পর নেট মারলাম,যাই হোক আমারও তোমায় অনেক কথা বলার আছে। কবে দেখা করবে বলো?"

রিতার সাথে সাথেই রিপ্লাই,"কবে হলো এসব! আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না, তুমি যেদিন বলবে সেদিন দেখা করব,তবে একটু তাড়াতাড়ি।" -"ও'কে তাহলে এই রবিবার, আমার এখান থেকে মোটে তো দু'ঘন্টার রাস্তা আমি চলে যাবো..............." এই ভাবে তারা তাদের প্রথম দেখা করার যায়গা,সময় ঠিক করল,যদিও তারা ফেসবুকে ছবি দেখে একে অপরকে চেনে,তবুও সামনা সামনি কিভাবে চিনবে তাও ঠিক হলো।

(৫.....) কথা মতো রবিবার বিকালে কলেজের মাঠে একটা টেন্সড মুখ নিয়ে বুকে দু'হাত জড়িয়ে সাদা একটা সালোয়ার পরে দাড়িয়ে আছে রিতা। কিছুক্ষন পর একটু দুরে বাস থেকে একটা ছেলে নেমে হেটে আসতে লাগলো। কথা মতো কালো শার্ট ইন করে জিন্সের সাথে পড়ে আসতে দেখে রিতার বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে ওটা মানস। কাছে আসতেই প্রথমে ফর্মালিটিজ অনুযায়ী কিছু কথা হলো,তারপর...রিতার কথা,"আমি তোমায় সব বললেও ফোনে এই কথাটা বলতে পারিনি যে আর ২ দিন পর আমার বিয়ে,অনেক বার চেষ্টা করেছি কিন্তু সেই সময় তোমার মার ট্রাজেডি ব্যাপার টার কারনে তোমার সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। সুযোগ পেলেও হয়তো বলতে পারতাম না। আমি হয়তো নিজের অজান্তেই তোমায় কিছুটা হলেও ভালোবেসে ফেলেছি....."

এই বলার মাঝে থামিয়ে মানস বলে উঠলো,"বলোনি ভালোই করেছো,কারন তোমার মতো আমিও ভালোবেসে ফেলেছি,আর এটা আরো ভালো বুঝলাম মা চলে যাওয়ার পর,যখন খুব মন খারাপ হতো তখন শুধু তোমার কথা মনে পড়তো। তাই তোমার কাছ থেকে দেখা করার কথা শুনে সাথে সাথেই হ্যাঁ বলে দিলাম" -"তাহলে তুমি আগে বলোনি কেন?" -"জানিনা কেন,কিন্তু তুমি না বললে হয়তো আমি বলতে পারতাম না রিতা।" -"এখন আর কিছু করার নেই,অনেক দেরি হয়ে গেছে, আগে জানলেও হয়তো অনেক কিছু সমস্যার কারনে পিছিয়েই আসতে হতো।" -"তার চেয়ে আমাদের মধ্যে যে বন্ধুত্ব থেকে মৃদু ভালোবাসা জন্মেছে,সেটাকেই বাচিয়ে রাখাটাই মনে হয় শ্রেয় হবে।" রিতা মানসের মুখে অনেকক্ষন চেয়ে রইল অবশেষে বলল,"ভালবাসার এই বন্ধুটা সবসময় আমার মনে স্থান করে থাকবে।",এই বলে রিতা পার্স থেকে একটা হাতঘড়ি বার করে দিলো মানসের জন্য, মানস ঘড়িটা হাতে নিয়ে বললো,"তোমার জন্যে এই ক্রিস্টাল ব্রেসলেট টা এনেছি,আমি কি পরিয়ে দেব তোমার হাতে?" -"হুম দাও" এই বলে দু'জন সামনা সামনি দাড়িয়ে রিতার ডান হাত টা নিয়ে পড়িয়ে দিল।বিকালের পড়ন্ত রোদ দুজনের মুখে পড়েছে। ব্লু ক্রিস্টাল ব্রেসলেট টা আরও চকচক করছে রোদে। এবার রিতা ঘড়িটা মানসকে পড়িয়ে দিয়ে,নিজেই মানসের হাতটা টেনে নিয়ে টাইম টা দেখলো আর বলল,"এখন ৪:১০ বাজে,সময় টা মনে রেখো। এটা আমাদের প্রথম দেখা। " মানস বললো,"হয়তো বা শেষও।"


ーーーーーーーーーーーーーーーーーー



Previous Post Next Post